কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে বিদ্রোহী কবি ও কবি পত্নী ব্যবহৃত সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার? এবার উঠলো সেই প্রশ্ন। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে কবির জন্মভিটে চুরুলিয়ায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করে তার ভাইপো কাজী আলি রেজা ও নাতনি সোনালী কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কবির ব্যবহৃত সামগ্রী কুক্ষিগত করে আর্থিক তছরূপের অভিযোগ আনলেন। রক্ষণাবেক্ষণের টাকা কোথায় গেলো জানতে চাইলেন তারা।
কাজী আলি রেজা বলেন, নজরুলের ভিটে সংস্কারের জন্য আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা ১০ লক্ষ রুপি এবং পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন চক্রবর্তী ৫ লক্ষ রুপি অনুদান দেন। সেই টাকা কোথায় গেলো?
সোনালি কাজী এবং আলি রেজার এই অভিযোগ অস্বীকার করে নজরুল অ্যাকাডেমির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার। তিনি বলেন, এখন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রয়েছে অ্যাকাডেমির সবকিছু। মিউজিয়াম সংস্কারের কাজ চলা তার ব্যাবহৃত সব সামগ্রী চুরুলিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এর পিছনে অন্য কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নেই। তবে সাংসদ বা বিধায়ক কারও বক্তব্য এখনও মেলেনি।
২০২০ সালে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভিটে চুরুলিয়ায় অবস্থিত নজরুল অ্যাকাডেমি অধিগ্রহণ করে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। রানিগঞ্জ রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের উদ্যোগে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ঠিক হয় যা কিছু রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো, তেমন সব কিছুই এখানে রক্ষিত থাকবে। বিশ্বভারতীতে যেমন কবিগুরুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রক্ষণাবেক্ষণ করা আছে, নজরুল সেন্টার ফর সোস্যাল এন্ড কালচারাল স্টাডিজও সেই কাজ করবে।
চুরুলিয়া নজরুল অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ তথা কবির পরিবারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে বারবার এই অ্যাকাডেমি অধিগ্রহণের আবেদন জানিয়ে ছিলেন বলে দাবি তাদের। কবির হাতের লেখা, গান-বাজনার যন্ত্রপাতি, পদক, বইসহ যাবতীয় অন্য জিনিস রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়ে না ওঠায় তারা সরকারের কাছে এটি অধিগ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছিলেন।
জানা গেছে, নজরুলের ওই জন্মভূমিতে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা, জমি-জায়গা। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এই সব কিছু অধিগ্রহণ করে দেখভালের জন্য। নজরুল অ্যাকাডেমি চেয়েছিল, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কবির জন্মভূমিতেই হোক। তা কিন্ত হয়নি।
চুরুলিয়ার নজরুল অ্যাকাডেমিতে বসে কবির পরিবার এখন অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখান থেকে মিউজিয়াম হটিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখানে কবির জন্মভিটে। দেশ-বিদেশের মানুষ আসেন। মিউজিয়ামটি অন্যত্র তুলে নিয়ে গেলে চুরুলিয়ার আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, রাজ্য সরকার দেড় কোটি রুপি অনুমোদন করেছেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের জন্ম ভিটে সংগ্রহশালা সংরক্ষণের জন্য। সেই টাকায় চুরুলিয়ার আমুল পরিবর্তন হবে। সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। চুরুলিয়াতেই মিউজিয়াম হবে। আপাতত কবির গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ পুরানো বিল্ডিং বা ভবনটি সংস্কার হবে। সংস্কারের পর জিনিসপত্র নিয়ে আসা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, কবির পরিবারের একাংশ কবিকে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছেন কিন্তু কবি নজরুল ইসলাম সবার। আর চুরুলিয়া নজরুল অ্যাকাডেমির অস্তিত্ব নেই এখন। এখানে কোনও বিতর্ক নেই।