পানামা পেপারস

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সম্পদের তদন্ত দাবি করলেন ইমরান খান

পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পরিবারের সম্পদের তদন্ত করতে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) প্রতি দাবি জানিয়েছেন। সোমবার পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে ইমরান খান এ দাবি জানান।

ইমরান খান

রবিবার বিশ্বের গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে জানা গেছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে বেশ কিছু গোপন আর্থিক লেনদেন করেছেন। এমনকি কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে গোপন সম্পত্তিরও মালিক তারা।

পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সন্তান মরিয়ম, হাসান এবং হোসাইন বিদেশে কয়েকটি কোম্পানির মালিক এবং বেশ কয়েকটি কোম্পানির হয়ে আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা রাখেন।  মরিয়মকে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি নিয়েলসেন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ও নেসকল লিমিটেডের মালিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানি দুটি প্রতিষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ১৯৯৪ ও ১৯৯৩ সালে।

আইসিআইজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোসাইন ও মরিয়ম ২০০৭ সালের জুনে নেসকল, নিয়েলসন ও অন্য একটি কোম্পানির নামে ১৩.৮ বিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিময়ের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

ইমরান খান বলেন, বেশ কিছু দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, সুইডেন ও ফ্রান্সসহ বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্র প্রধান ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। তাহলে কেন পাকিস্তানে তদন্ত হবে না।

ইমরান আরও বলেন, যদি এনএবি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায় তাহলে শরিফের পরিবারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।

নওয়াজ শরিফের সন্তানরা কিভাবে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তার জবাব দিতেও আহ্বান জানান ইমরান।

ফাঁস হওয়া তথ্যকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ইমরান বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা কিভাবে দেশে বিনিয়োগ করতে বলে?

দুই বছর আগে মরিয়ম নওয়াজের দেওয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইমরান। ওই সময় মরিয়ম দাবি করেছিলেন বিদেশে তাদের কোনও সম্পদ নাই। ইমরান বলেন, কিন্তু এখন হোসাইন নওয়াজ টিভিতে আসেন এবং স্বীকার করেন বিদেশে মরিয়মের দুটি কোম্পানি রয়েছে।

পিটিআই প্রধান দাবি করেন, দেশে বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে লুঠ হওয়া অর্থই বিদেশে পাচার হচ্ছে।  তিনি বলেন, আমি আমার সম্পত্তির বিবরণ দিয়েছি। আমার যা কিছু আছে তা সব পাকিস্তানেই। যে কেউ এসব সম্পত্তি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। আমরা কি তাদের সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে পারি না? তারা কে? তারা কি রাজ পরিবার?

রবিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত কিভাবে কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদ গোপন করেন এবং কিভাবে অর্থ পাচার করেন; তা প্রকাশিত হয় পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ১৫ লাখ কর নথি ফাঁস হওয়ার পর।  এরপর বিষয়টি সারা বিশ্বে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। রাশিয়া পানাম পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকো এ ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

ওই ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা গেছে, সাবেক ও বর্তমান ৭২ জন রাষ্ট্রপ্রধান তাদের দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ফাঁস হওয়া নথিতে উঠে এসেছে ফিফার দুর্নীতির প্রসঙ্গও। জার্মান দৈনিক জিড্ডয়েটশ সাইটুঙ্গ ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। সূত্র: ডন, সিএনএন।

/এএ/