‘শুয়াংগুই’ বদলে ‘লিউঝি’, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চীনে আসছে নতুন আইন

সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ভালোভাবে তদন্ত করার জন্য যে আইন পাস করার কথা চীন জানিয়েছিল তা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। বিতর্কিত ওই আইনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় কমিশন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার দায়িত্ব পাবে। সমালোচকরা মনে করেন, এতে সরকারের ওপর পার্টির প্রভাব আরও বেড়ে যাবে। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগ পাবে না। সমালোচনার জবাবে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে চীন।    

chainaCourt

চীন মনে করে, সরকারি কর্মকর্তাদের করা দুর্নীতি আর সাধারণত হওয়া অপরাধের মধ্যে ফারাক অনেক। তাই সাধারণ অপরাধের তদন্ত যেভাবে করা যায় সেভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্ত করা সম্ভব নয়।  বেইজিংয়ের দুর্নীতি বিরোধী কমিশনের প্রধান ঝ্যাং সোফু সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্য পড়ে জানিয়েছেন, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সে জন্যই এই নতুন আইন পাস করাতে যাচ্ছে। অন্য কোন দেশের উদাহরণ থেকে চীন এমন কমিশন করার অনুপ্রেরণা পেয়েছে কি না জানতে চাইলে ঝ্যাং সোফু বলেছেন, ‘চীনের কাজ করার পদ্ধতি অন্য যে কারওর চেয়ে আলাদা। অন্যান্য দেশের এমন সংস্থা আদালত-আইনজীবীদের নীচে থাকে।’

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং দুর্নীতি বিরোধী অভিযান তিব্রতর করতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি চান সরকারি কর্মকর্তারা যেন ‘খাঁচায়’ থাকে এবং দুর্নীতি করার সুযোগ না পায়। শি জিন পিংয়ের ইচ্ছানুযায়ী ‘লিউঝি’ নামের জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এটি আসছে আগের ‘শুয়াংগুই’ পদ্ধতির পরিবর্তে। ‘শুয়াংগুই’ পদ্ধতিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ও স্থান নির্ধারণের ক্ষমতা থাকে তদন্তকারীদের হাতে।  ওই পদ্ধতির সমালোচনা করে অধিকারকর্মীরা বলেছিলেন, তদন্তকারীদের হাতে স্থান ও সময় নির্ধারণের সুযোগ থাকায়, অনেককে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয়েছে। এমন কি বলপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দিও আদায় করা হয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন, নতুন পদ্ধতি ‘লিউঝি’ আগের চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন কিছু হবে না। বরং আগের পদ্ধটিতিকে গ্রহণযোগ্য করতে তাতে আইনের রং দেওয়া হয়েছে।

চীনের সংসদকে ‘সিলসর্বস্ব’ আখ্যা দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস প্রস্তাবিত বিধানটি আইন হিসেবে পাস করিয়ে দেবে এবং মার্চে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সভায় তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এরপর থেকে ‘ন্যাশনাল সুপারভিশন কমিশন’  যেকোনও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চালাতে পারবে।

ফিনানশিয়াল টাইমস লিখেছে, এই পরিবর্তনের ফলে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের নূন্যতম কোনও সুযোগ থাকবে না। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চেয়েও কমে যাবে।