হংকংয়ের বিক্ষোভ সমর্থনে মার্কিন আইন, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া চীনের

হংকংয়ে চলমান চীনবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রীপন্থী বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণয়ণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। ক্ষুব্ধ বেইজিং দাবি করেছে, ‘কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ’ গ্রহণ করা হবে।  বুধবার কংগ্রেসশনাল আইনটিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ আইনকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন।  

download

এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং এখন চীনের অংশ। ‘এক দেশ, দুই নীতি’র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন।  কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চললেও সম্প্রতি হংকং-এর গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৮ নভেম্বর ভোর থেকেই হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের তীব্র সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। এক পর্যায়ে ব্যারিকেডের পেছন থেকে পুলিশের দিকে পেট্রোল বোমা ও তীর ছুড়ে মারে আন্দোলনকারীরা। এতে ইউনিভার্সিটির প্রবেশপথে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, পুলিশের ওপর হামলা বন্ধ করা না হলে তারা বিক্ষোভরতদের ওপর গুলি ছুড়বে। এমন পরিস্থিতিতেই পার্লামেন্টে বিল এনে হংকং-এর বাসিন্দাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হংকং ইস্যুতে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইচ্ছেমতো কর্মকাণ্ড’ অব্যাহত তাকে তাহলে ‘কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে।

চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউচেং বৃহস্পতিবার দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত টেরি ব্রানস্টাডকে তলব করেছেন। তার কাছে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ব্যাখা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঠেকানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

চীনের দাবি, তারা ‘এক দেশ, দুই নীতি’ ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। হংকংয়ের চলমান বিক্ষোভের জন্য বিদেশি শক্তিদের দায়ী করেছে দেশটি।

বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই তথাকথিত আইনটি হংকংসহ চীনের জনগণের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অশুভ উদ্দেশ্য ও আধিপত্যবাদের প্রকৃতি উন্মোচন শক্তিশালী করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেং জিগুয়াং দাবি করেছেন, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি এ ‘ভুল সংশোধনের’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত একটি নোটিস পোস্ট করা হয়েছে। এতে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
জেং জিগুয়াং-এর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পাস হওয়ার বিলের মাধ্যমে হংকং-এর বিক্ষোভকারীদের সহিংসতায় উসকানি দেওয়া হয়েছে; যা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির গুরুতর লঙ্ঘন। এ ঘটনায় বেইজিং তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে।

হংকংয়ের বেইজিংপন্থী সরকার বলেছে, এই আইন বিক্ষোভকারীদের প্রতি ভুল বার্তা দেবে এবং তাদের শহরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘স্পষ্ট হস্তক্ষেপ’।

হংকং থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক অ্যান্ড্রিউ টমাস বলেন, বিষয়টি শুধু হংকংয়ের নয়। এটি হলো চীনের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। এর ফলেই বেইজিং এত ক্ষুব্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে খতিয়ে দেখা হবে চীন হংকংয়ের নাগরিক স্বাধীনতা ও আইনে হস্তক্ষেপ করেছে কি না। এছাড়া আইনে হংকংকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব হংকংয়ে পড়বে না। হংকংয়ের বাসিন্দারা অসহিংস আন্দোলনের কারণে গ্রেফতার হলেও তাদের ভিসা সুবিধা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।