ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যর্থতা থেকে ‘শিখতে’ চায় চীন

ইউক্রেনে সেনা প্রত্যাহার ও পুনরায় সংগঠিত হওয়া, কৃষ্ণ সাগরে ফ্ল্যাগশিপ যুদ্ধজাহাজের ডুবে যাওয়া, ক্রমশ রাশিয়ার সামরিক ব্যর্থতা বাড়ছে। কীভাবে সেনা ও অস্ত্র সংখ্যায় অনেক পিছিয়ে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে ক্ষত-বিক্ষত করছে, এই পরিস্থিতি চীনের চেয়ে গভীরভাবে কোনও দেশ পর্যবেক্ষণ করছে না।

রাশিয়ার মতো চীনও সোভিয়েত আমলের ধাঁচের সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা নেতা শি জিনপিং ইউক্রেনে আক্রমণে রুশ বাহিনীর দুর্বলতায় তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। কারণ, চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএও) এবং স্ব-শাসিত তাইওয়ান নিয়ে তাদের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এসব দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির নিরাপত্তা গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক টেইলর ফ্রাভেল বলেন, জিনপিং ও পিএলএ নেতাদের সামনে বড় প্রশ্ন হওয়া উচিত বড় ধরনের সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি বাহিনী ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের চেয়ে জটিল অভিযান বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা।

এক দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে। জর্জিয়া, চেচনিয়া, সিরিয়া ও ক্রিমিয়াকে অঙ্গীভূত করার যুদ্ধ থেকে শিক্ষা পেয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনে আক্রমণে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।

ফ্রাভেল মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো শি জিনপিংও একজন স্বৈরাচারী নেতা। চীনের সামরিক সংস্কারে পুতিনের মতোই ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। ফলে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর মতো পরিস্থিতি তাদেরও হতে পারে তার আশঙ্কা থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রা টেকনোলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডেভিড চেন জানান, সামরিক দক্ষতা প্রমাণের মতো সাম্প্রতিক কোনও সংঘাতে লিপ্ত হয়নি চীন। সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য লড়াই ছিল ১৯৭৯ সালে, ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে।

ডেভিড চেন, চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের জন্য সতর্ক বার্তা হলো এমন অভিযানের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত নয় এমন অজ্ঞাত অনেক বিষয় থাকতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্স-এ কাগজে-কলমে প্রশংসনীয় হলেও বাস্তব জগতে অনেক বেশি জটিল হতে পারে।

ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছরে ২০১৫ সালে চীনের সামরিক সংস্কারের নেতৃত্বে আসেন শি জিনপিং। দেশটির সেনার সংখ্যা ২০ লাখ থেকে কমিয়ে ৩ লাখ হয়েছে, এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং নন-কমিশনড কর্মকর্তাদের মাঠে নেতৃত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর সিনিয়র ফেলো ইউয়ান গ্রাহাম জানান, জিনপিং সবসময় রাজনৈতিক সমাধান কাজে লাগাবেন। কারণ, তিনি সামরিক বিশেষজ্ঞ বা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ নন। আমার মনে হয় সামরিক অভিজ্ঞতাকে রাজনীতির আলোকে বিচার করতে হবে। ফলে আমি নিশ্চিত নই যে শিক্ষা বহুল এবং সবাই দেখতে পারছে তা চীন করবে কিনা।

মার্কিন মেরিন কর্পস-এর কমান্ডার জেনারেল ডেভিড বারজার গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় এক ফোরামে বলেছেন, ইউক্রেনে সংঘাত নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে বেইজিং।

তিনি বলেন, কোন শিক্ষা তারা গ্রহণ করবে তা আমি জানি না। কোনও সন্দেহ নেই তারা শিখতে মনোযোগী। কারণ, গত ১৫ বছর তারা এটি করে আসছে।

সূত্র: এপি