প্রতিবন্ধীদের আন্দোলনে বিপাকে পোল্যান্ড সরকার

মাসিক ভাতা ১২০ ইউরো বাড়াবার দাবিতে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পোল্যান্ডে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বর্তমান ভাতার পরিমাণ মাসিক ২৪৫ ইউরো। পোলিশ সংসদ ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের কেউ হুইল চেয়ারে, কেউ বা চাদরের ওপর শুয়ে। নিজেরা চলতে অক্ষম হওয়ায় তাদেরকে সেখানে নিয়ে গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। বার্তাসংস্থা এএফপি লিখছে, দাবির পক্ষে শুধু যে তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন তা নয়, বরং পোল্যান্ডের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। এতে চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর। সরকারি দল পিআইএস ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার আগে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে উদার হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু গত মাসে তারা প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়িয়েছে মাত্র ৩৯ ইউরো। আন্দোলনকারীরা এই অপ্রতুল বৃদ্ধির বিষয়ে অসন্তুষ্ট।0ff099eed0d95b251cfe2b1bb5f9704e9cd81e8e

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের যারা ওই অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছেন তাদের দাবি, দেখভালকারীদের নির্ধারিত মাসিক ভাতা যেন ১২০ ইউরো (১৪১ ডলার) বাড়ানো হয়। শারীরিক অক্ষমতার দরুন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে না পারায় সংসদের বিরোধী দলীয় সদস্য ও সংসদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তায় তারা খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতে পাচ্ছেন। এদিকে সরকারে থাকা রক্ষণশীল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস’ (পিআইএস) পার্টি অভিযোগ করে বলেছে, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিরোধী দলের উস্কানিতে প্রতিবন্ধীরা ওই আন্দোলন করছে।  

প্রতিবন্ধীদের আন্দোলনে জনসমর্থনের বিষয়টিও উঠে এসেছে এএফপির প্রতিবেদনে। অনেক বিস্কুট, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ফলের রসের প্যাকেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়ারশর অবসরপ্রাপ্ত বাসিন্দা জোফিয়া কোজেইলস্কা বলেছেন, ‘আমি খাবার, স্যানিটারি পণ্য ও বড়দের ডায়াপার নিয়ে এসেছি।’

আরেকজন নারী আন্দোলনকারীদের পোশাক ধুয়ে ইস্ত্রি করে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি এর মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের মায়েদের প্রতি সমমর্মিতা জানাতে চেয়েছেন। এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘এই মায়েরা অসম সাহসী। আমি তাদের জন্য অন্তত এটুকু তো করতেই পারি।’ এছাড়া আন্দোলনকারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাটিতে শুতে দেখে সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা তাদের জন্য ম্যাট্রেস এনে দিয়েছেন।

প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়াবার আন্দোলন শুরু হয়েছে গত মাসে। ইতোমধ্যে সংসদ ও সংসদের সামনে থাকা আন্দোলনকারীদের কাছে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত সাংবাদিক ছাড়া সাধারণ কেউ আর আন্দোলনকারীদের কাছে যেতে পারছেন না। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পোলিশ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাকশনের’ প্রধান কর্মকর্তা জানিনা ওচোজস্কাকেও আন্দোলনকারীদের কাছে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী যাকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলতে হয়। তার ভাষ্য, ‘আমি আশা করেছিলাম আমার মতো যারা তাদের সারা জীবন অধিকারবঞ্চিতদের সাহায্য করতে ব্যয় করেছে তারা প্রবেশাধিকার পাবে।’ কিন্তু ওচোজস্কাকে পোলিশ সংসদের সীমানা প্রাচীরের বাইরেই থাকতে হয়েছে।তিনি এএফপিকে বলেছেন, আন্দোলনকারীরা যে ১২০ ইউরো ভাতা বাড়াবার দাবি করছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। তাদের ফিজিওথেরাপি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে অনেক অর্থের দরকার।

প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়াতে সরকার নতুন করারোপের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন প্রতিবন্ধীর মা আইওয়ানা হার্টউইচ বলেছেন, ‘ওই অর্থ আমলাতন্ত্রের জালে হারিয়ে যাবে। আমাদেরত ছেলেমেয়েরা কখনও ওই অর্থের মুখ দেখতে পারবে না।’ রক্ষণশীল সরকারের বক্তব্য এই আন্দোলন বিরোধীদলের উস্কানিতে হচ্ছে। প্রতিদিন বিরোধী দলের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন। ওপর দিকে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাদের আন্দোলন অরাজনৈতিক। তারা আগের প্রগতিসল সরকারের আমালেও আন্দোলন করেছেন। এএফপি লিখেছে, তখন বিরোধী দলে থাকা পিআইএস আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়েছিল।

 বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি বছর এক জোড়া অর্থোপেডিক জুতা, পাঁচ বছর পর পর একটি হুইল চেয়ার ও অন্য কোনও আয়ের উৎস না থাকা দেখভালকারীদের  মাসিক ২০০ ইউরো ভাতা দেওয়ার বিধানকে ২০১৪ সালে পোল্যান্ডের আদালত অস্নগবিধানিক ঘোষণা করেছিল। তবে তা এখনও চালু রয়েছে।