অ্যাকুয়ারিয়াসকে নোঙর করতে দিয়েছে স্পেন, জাহাজে ছিলেন বাংলাদেশিও

সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে ইউরোপে অভিবাসী হতে ইচ্ছুকদের নিয়ে তীরে ভিড়তে চাওয়া যে অ্যাকুয়ারিয়াস জাহাজকে ইতালি ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই জাহাজকে স্পেন নোঙর করতে দিয়েছে। জাহাজটি রবিবার স্পেনের ভেলেনসিয়া বন্দরে ভিড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডিল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, জাহাজটিতে থাকা ব্যক্তিদের স্বাগত জানানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী, অনুবাদক ও চিকিৎসকরা সমাবেত হন। বন্দরে জাহাজটি ভেড়ার সময়ে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সেক্রেটারি জেনারেল এলহাজ আস সি উপস্থিত ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘কোনও মানুষই অবৈধ নয়।’ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অভিবাসী হতে ইচ্ছুকদের নিয়ে স্পেনের বন্দরে ভেড়া ওই জাহাজে বাংলাদেশিও ছিলেন।অ্যাকুয়ারিয়াস

ইতালিতে সম্প্রতি রক্ষণশীলরা ক্ষমতা এসেছে। নির্বাচনে তারা অভিবাসীদের ঠেকাতে ব্যবস্থার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স’ নামে পরিচিত ‘মেডিকেল স্যান ফ্রন্টিয়ার্সের’ (এমএসএফ) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা জার্মান স্বেচ্ছাসেবীসংগঠন ‘এসওএস মেডিটেরানির’ পরিচালনাধীন জাহাজ অ্যাকুয়ারিয়াস ভূমধ্যসাগরের লিবীয় উপকূল থেকে ওই মানুষদের উদ্ধার করেছিল। তার নৌকায় চড়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশে অভিবাসী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাগরে তাদের নৌকা ডুবে যায়। ইতালির নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বেসরকারি জাহাজ তাদের উদ্ধার করে অ্যাকুয়ারিয়াসে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ইতালির সরকার তাদের ইতালিতে অবতরণের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সরকারের সিদ্ধান্তে দেশটির ‘মেরিটাইম রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের নিয়ে ইতালির বন্দরে নোঙর করতে চাওয়া জাহাজটিকে ভূমধ্যসাগরেই স্থির থাকার আদেশ দিয়েছিল। অ্যাকুয়ারিয়াস নামের জাহাজটিতে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ছিল ১২৩ জন এমন শিশু যাদের সঙ্গে কোনও অভিভাবক নেই। ১১ জন খুবই ছোট শিশু ও ৭ জন গর্ভবতী নারীও ছিলেন ওই জাহাজে। শিশুগুলোর বেশিরভাগই ইরিত্রিয়া, ঘানা, নাইজেরিয়া ও সুদানের বাসিন্দা। জাহাজে ২৬টি দেশের নাগরিক ছিলেন। বিবিসি জানিয়েছে, জাহাজে পাকিস্তানি, আফগানিস্তানিদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশিও।জাহাজে থাকা উদ্ধারকৃতরা

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালভেনি ৯ জুন বলেছিলেন, মানব পাচার বন্ধ করতে হবে। যেসব সংগঠন সমুদ্র থেকে ডুবন্ত অভিবাসীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে তাদেরকে তিনি মানব পাচারকারীদের সহযোগী আখ্যা দেন। অভিবাসীদের জাহাজ ভিড়তে না দেওয়ায়র প্রতিক্রিয়ায় হওয়া সমালোচনার জবাব দিতে তিনি বলেছিলেন, ‘মাল্টা কাউকে নেয় না। ফ্রান্স অভিবাসীদের সীমানা থেকেই বের করে দেয়। আর স্পেন তো সীমান্তে গুলি চালায়।’

স্পেনের বন্দরে ওই অভিবাসীদের গ্রহণ করার পর আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সেক্রেটারি জেনারেলের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অ্যাকুয়ারিয়াস জাহাজের এই দুঃখজনক সমুদ্রযাত্রা সবার জন্যই একটি সতর্ক বার্তা: জাতীয়তা বা অভিবাসন বিষয়ক আইনি স্বীকৃতি যা-ই হোক না কেন সব মানুষেরই সুরক্ষার ও নূন্যতম সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’ সির ভাষ্য, ‘কোনও মানুষই অবৈধ নয়। যে মানুষের সহায়তার দরকার, তার তা পাওয়া উচিত।’

ইউরো নিউজ জানিয়েছে, মানবিক কারণে স্পেন সরকার ওই অভিবাসীদের ৪৫ দিনের জন্য বিশেষ অনুমতি প্রদান করেছে। ওই সময়ের মধ্যে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে তারা ফ্রান্সে অভিবাসী হওয়ার জন্যও চেষ্টা করতে পারবেন। অভিবাসীরা এ সিদ্ধান্তে খুবই খুশি।  তারা স্পেনে একটি নতুন জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখার কথা জানিয়েছেন ইউরো নিউজকে।