হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ইহুদিদের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনযজ্ঞের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মৃতির উদ্দেশে হাঙ্গেরি নতুন একটি জাদুঘর নির্মাণ করেছে। স্থাপনাটি ইতোমধ্যে দেশটির একটি ইহুদি সংগঠনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথা রয়েছে, হাঙ্গেরির ইহুদিদের হত্যার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান জাদুঘরটির উদ্বোধন করবেন। কিন্তু এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ইসরায়েলভিত্তিক ইহুদিদের একটি সংগঠন বলেছে, ইহুদি হত্যায় জড়িত হাঙ্গেরির সেই সময়কার নেতৃবৃন্দের তথ্য এড়িয়ে গেছে জাদুঘরের উদ্যোক্তারা, যা ইতিহাস বিকৃতির সামিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উত্থাপিত আপত্তির বিষয়ে ইহুদিদের বিভক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা চান, বিতর্ক এড়াতে জাদুঘরের পরিচালনার ভার আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে ন্যস্ত করা হোক।s2.reutersmedia.net

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধে ইউরোপে মোট ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। আর এসময় শুধু হাঙ্গেরি থেকেই প্রায় পাঁচ লাখ ইহুদিকে পোল্যান্ডের ডেথ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল জার্মানির নাৎসি বাহিনী। নাৎসিদের হাতে তুলে দেওয়া ছাড়াও হাঙ্গেরির তৎকালীন ডানপন্থীরা ইহুদিদের বুদাপেস্টের বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে ইহুদিদের হত্যার কাজটি করেছিল মূলত তারাই।

হাঙ্গেরিতে পুরাতন একটি রেল স্টেশনকেই জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের সাত তারিখে হাঙ্গেরির সরকার দেশটির তিন ইহুদি সংগঠনের একটি ‘হাঙ্গেরিয়ান জিউইশ কংগ্রেগেশনকে’ (ইএমআইএইচ) ‘হাউজ অব ফেইটস’ নামের যাদুঘরটির মালিকানা বুঝিয়ে দেয়। সংস্থাটি সরকারের সহায়তায় প্রদর্শনীর বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। এতে মূল ভূমিকা রাখবেন ইতিহাসবিদ মারিয়া শমডিট। তিনি ভিক্টর ওরবানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং সরকার সমর্থক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনায় জড়িত।

‘হাউজ অব ফেইটসে’ প্রদর্শনীর আওতায় থাকবে ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হাঙ্গেরির ইহুদিদের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা। এর পাশাপাশি চলবে শিক্ষামূলক কার্যক্রম। কিন্তু ২০১৪ সালে ঘোষিত এই প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ইসরায়েলভিত্তিক হলোকাস্ট সংক্রান্ত সংগঠন ইয়াদ ভাশিম। ইয়াদ ভাশিম লাইব্রেরির পরিচালক রবার্ট রোজেট মন্তব্য করেছেন, ‘ইহুদিদের হাঙ্গেরি ছাড়া করা এবং তাদেরকে জার্মানির নাৎসিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে হাঙ্গেরির তৎকালীন নেতাদের ভূমিকা চেপে যাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট জাদুঘরটিতে। মানুষকে জানানো হচ্ছে, হাঙ্গেরি ওই সময় আসলে উদ্ধারকারী ছিল। কিন্তু এটা স্পষ্টভাবেই ইতিহাস বিকৃতি।’

এই অভিযোগের বিষয়ে ইএমআইএইচের প্রধান স্লোমো কোভস বলেছেন, যাদুঘরটিতে যা যা দেখানো হবে তার অর্ধেক মাত্র এখন পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছে। ভবিষ্যতে ইয়াদ ভাশেমসহ অন্যান্যদের মতামত যাদুঘর পরিচালনায় গ্রহণ করা হবে। ‘ওয়ার্ল্ড জিউইশ কংগ্রেস’ হাঙ্গেরির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, জাদুঘরটির ব্যবস্থাপনা ইয়াদ ভাশিম, যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মিউজিয়াম বা ‘ফেডারেশন অব হাঙ্গেরিয়ান জিউইশ কমিউনিটিজের’ মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। ‘ফেডারেশন অব হাঙ্গেরিয়ান জিউইশ কমিউনিটিজের’ চেয়ারম্যান অ্যান্দ্রাস হেইসলারের মন্তব্য, ‘ইহুদিদের বিভক্ত করে ফেলার বিষয়টি আমাদের ওপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলেবে।’