গ্যাস পাইপলাইন ঘিরে রুশ, জার্মান ও মার্কিন ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব

রাশিয়ার পুতিনবিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ নিয়ে রুশ ও জার্মানির চলমান বিরোধের মধ্যেই আরেকটি দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। এতে যোগ দিয়েছে রাশিয়ার পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বি যুক্তরাষ্ট্রও। এবারের বিরোধী নর্ড স্ট্রিম-২ গ্যাস পাইপলাইন ঘিরে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র বাংলা সংস্করণের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি জানা গেছে।

_114316085_gettyimages-1017649722

ইউরোপে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাবকে ঘিরে যে রাজনীতি চলছে তাতে এই নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এই রাজনীতিতে রাশিয়া, জার্মানি ছাড়াও রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি দেশ। বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া সরাসরি জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে। নর্ড স্ট্রিম-২ কিন্তু রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের প্রথম প্রকল্প না। এর আগে নর্ড স্ট্রিম-১ নামে একটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে যেটি চালু আছে।

নর্ড স্ট্রিম-১ এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১১ সালে। দ্বিতীয় প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২১ সালে। এটির দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার লাইন ইতোমধ্যে বসানো হয়ে গেছে।

গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস’র একটি মন্তব্য ঘিরে। অ্যালেক্সি নাভালনির ওপর বিষ দিয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেছিলেন, আমার আশা নর্ড স্ট্রিম-২ নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিবর্তনে রাশিয়া আমাদের বাধ্য করবে না।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেক্সি নাভালনির ওপর হামলার তদন্ত করার জন্য রুশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে নর্ড স্ট্রিম-২ প্রকল্প বাতিল হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত করেন।

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, ওই পাইপলাইনের প্রতি সমর্থন তিনি পুনর্বিবেচনা করতে প্রস্তুত আছেন। পরে তার একজন মুখপাত্র বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন ম্যার্কেল তার সাথে একমত।

চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত জার্মান সরকারের অবস্থান ছিল নর্ড স্ট্রিম-২ প্রকল্পের সঙ্গে নাভালনির ওপর বিষপ্রয়োগের ঘটনাটিকে এক করে দেখা ঠিক হবে না। কিন্তু জার্মান নেতাদের সাম্প্রতিক কথাবার্তায় নর্ড স্ট্রিম-২ প্রকল্প সম্পর্কে মনোভাব কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

জার্মানি এখন চেষ্টা করছে কয়লা এবং পরমাণু জ্বালানি শক্তির ব্যবহার কমিয়ে আনতে। সমালোচকরা বলছেন, নর্ড স্ট্রিম-২ প্রকল্পের মাধ্যমে জার্মানি গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

মডার্ন ডিপ্লোম্যাসি সাময়িকীতে এক নিবন্ধে পিটার করযন উল্লেখ করছেন, অন্যদিকে বাল্টিক দেশগুলো এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে এই কারণে যে, এই পাইপলাইনকে রক্ষার জন্য রুশ নৌবাহিনী পুরো অঞ্চল জুড়ে টহল দিতে থাকবে। রাশিয়া এমনকি তার সামরিক অভিযানের জন্য একে ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এতে এসব দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।

নর্ড স্ট্রিম-২ প্রকল্প নিয়ে মের্কেল সরকার ইউরোপীয় দেশগুলোর তরফে থেকে বেশ চাপের মুখে পড়েছেন। তাদের যুক্তি, জ্বালানি নিশ্চয়তার জন্য রাশিয়ার মতো রাজনৈতিকভাবে নড়বড়ে একটি দেশের ওপর নির্ভর করা যায় না।

এই প্রকল্পের সবচেয়ে জোর বিরোধিতা এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাম্প সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের কনজারভেটিভ এবং গ্রিন পার্টি নেতারা প্রকল্পটি বাতিল করার দাবি তুলেছেন।

বার্লিন থেকে বিবিসি সংবাদদাতা ডমিনিক ম্যাকগিনেস জানান, অনেক জার্মান এই প্রকল্পকে সমর্থন করেন কারণ তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-বিরোধী। অনেক জার্মান তাকে খুব অপছন্দ করেন। এই পাইপলাইনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অনর্গল কথাবার্তা এর প্রতি সমর্থন আরও বাড়াতে সাহায্য করেছে। অনেক ভোটার মনে করেন তিনি এই প্রকল্প বাতিল করে জার্মানিতে আমেরিকার গ্যাস রফতানির সুযোগ খুঁজছেন ট্রাম্প।