২ হাজার বছরের পুরনো গাছ বাঁচাতে স্থানীয়দের 'যুদ্ধ'

ইতালিতে সার্দিনিয়ার গ্রামের পাহাড়ের চূড়ায় প্রাচীন জলপাই গাছ বাঁচাতে যেন যুদ্ধে নেমেছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি দেশটিতে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ দাবানলে ওই গ্রামের বহু গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাদ যায়নি কুলিয়েরি গ্রামের ১৮শ' থেকে ২ হাজার বছরের পুরনো ঐতিহাসিক জলপাই গাছটিও। সবার প্রচেষ্টায় এই গাছটি বাঁচবে বলে আশাবাদী ইতালীয়রা

উত্তাল ভূমধ্যসাগরের সার্দিনিয়া দ্বীপটি মূলত পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয়। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে নানা দেশের ট্যুরিস্টদের আনাগোনো লেগেই থাকে। বিশেষ করে দ্বীপের পানি এতটাই স্বচ্ছ, যাতে বিমোহিত হন আগতরা।

এই গ্রীষ্মের জুলাইয়ে ইতালির তাপমাত্রা ঠেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সার্দিনিয়াতেও তাপমাত্রা অন্যান্য সময়ের তুলনায় রেকর্ড গড়ে। এতেই ঘটে বিপত্তি। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় দাবানল বয়ে যায় এখানেও। একে একে বহু ঘর-বাড়ি, জলপাই গাছকে পুড়ে ছাই করে দেয় সর্বগ্রাসী আগুন। আর কুলিয়েরি গ্রামের হাজার বছরের পুরনো বিরাট জলপাই গাছটিতেও আগুন লেগে যায়। টানা দুই থেকে তিনদিন জ্বলে এই গাছটি। তারপরও গাছটি বাঁচবে বলে আশায় স্থানীয়দের।

জলপাই গাছটি বাঁচাতে চেষ্টা করছেন একজন

কালিয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক জানলুইজি বাক্কেত্তা, গাছটির প্রাণ আগের মতো ফিরে পেতে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন। আর কুলিয়েরির এক কর্মকর্তা জানান, 'এই গাছটি আমাদের পরিচয়। যদি বাঁচাতে পারি তবে, এই দাবানলে যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদেরকে বার্তাটা দিতে পারবো'।

অধ্যাপক বাক্কেত্তা সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রাচীন গাছটিকে রক্ষায় নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের প্রয়োজন ছিল। কারণ দাবানলের কারণে গুরুতর পর্যায়ে চেলে গেছে। তবে আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশা রাখি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরবে’।

এই অধ্যাপক এবং তার দলবল নিয়ে গাছের মাটি শীতল করার জন্য পানি দেন। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সেখানকার গ্রাম থেকে পানির ট্যাংক দিয়ে সেচ ব্যবস্থা করেছে। এতে বেশ কাজে দেয় বলেও জানান তিনি।

হাজার বছরের পুরনো জলপাই গাছ বাঁচাতে সরকারের পাশপাশি স্থানীয় একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে বেশ কিছু সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছে। গাছটির শেকড় বৃদ্ধির জন্য ১০ দিন পরপর জৈব সার দেওয়া হয়। আগামী সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরের মধ্যে নতুন অঙ্কুর বের হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী অধ্যাপাক বাক্কেত্তা।

পুড়ে যাওয়া গাছটি

শুধু এই গাছটির পরিচর্যা নিয়েই বসে থাকেননি তিনি। দাবানলে এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জলপাই গাছ কিভাবে রক্ষা করা যায় এ নিয়েও কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এখানে ১৯৯৪ সালেও ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি হয়। এতে ঐতিহাসিক গাছটি বেঁচে গেলেও অনেক জলপাই গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

পুরো যাওয়ার আগে জলপাই গাছটি