রুশ কয়লা থেকে মুখ ফেরালো ইউরোপ, বাকি আছে তেল

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নতুন মোড় নিতেই নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা একযোগে সম্মত হয়েছেন— রাশিয়া থেকে আর কয়লা নিচ্ছি না আমরা। ধারণা করা হচ্ছে, এর পরই আসছে তেল আমদানি বন্ধের ঘোষণা।

শুক্রবার ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্তের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে রাশিয়ার বাৎসরিক ৮০০ কোটি ইউরোর কয়লা রফতানিতে। আগামী চার মাস ধরে আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে বলে সিএনএন’কে জানিয়েছে ইইউর একটি সূত্র।

তবে কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে যথেষ্ট মনে করছেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ক্রামাটর্সকের রেল স্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার তেল সাপ্লাইয়ের ওপর অবরোধ আরোপে ইউরোপকে আর কত সময় অপেক্ষা করতে হবে?’

এদিকে ইউরোপিয়ান কমিশন জানিয়েছে, ইউরোপের ৪৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ২৫ শতাংশ জ্বালানি তেলের যোগান দিচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলা শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার কোটি ইউরোর জ্বালানি রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ইউরোপ।

তাই সহসা জ্বালানি তেল নিয়ে তেমন একটা সরব হবে না ইউরোপ এমনটাই ধরে নিয়েছিল অনেকে। তথাপি, ক্রামাটর্সকের রেল স্টেশনে হামলার পর যথারীতি ইউরোপের ওপর চাপ বাড়ে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান।

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কলজও জানিয়েছেন, তার দেশ এ বছরের মধ্যেই রুশ তেল আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হবে। যুক্তরাজ্য সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটা বলেন।

এর আগে মার্চেই ইউরোপ ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ২০২৭ সাল নাগাদ রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা শতভাগ কমাবে। তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এ সময়সীমার আগেই আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইউরোপ। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন গত বুধবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বলেছেন, রাশিয়ার ওপর পঞ্চম অবরোধই শেষ কথা নয়। এখন আমরা কয়লা নিচ্ছি না। সামনে আমাদের তেল নিয়ে ভাবতে হবে।’

এদিকে, রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা ইউরোপের একেক দেশে একেক রকম। মার্চের শুরুর দিকে হাঙ্গেরির পুনঃনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান বলেছিলেন, তারা রাশিয়ার আগ্রাসন ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকলেও হাঙ্গেরির পরিবারগুলো যুদ্ধের মূল্য দিক, এমনটা তিনি চান না। তার মতে, অবরোধের সীমারেখায় তেল ও গ্যাসকে আনা একদমই উচিত হবে না।

ইউরোপ যদি তেলে অবরোধে দিয়েও দেয়, তবে রিজার্ভ ও অন্য মিত্রদের কারণে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না বলেও জানা গেছে সিএনএন-এর খবরে।

ইউরোপে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ ঠিক রাখতে গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজেদের রিজার্ভে থাকা ১৮ কোটি ব্যারেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল। একইসঙ্গে আইইএ-এর সদস্য দেশগুলোও ৬ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।