ইউরোপের আরও এক দেশে মাংকিপক্স শনাক্ত

ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো একজনের মাংকিপক্স শনাক্ত হয়েছে। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আসা বার্নের ক্যান্টনে বসবাসকারী একজন ব্যক্তির মাংকিপক্স ধরা পড়েছে।

বার্নের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদেশি সংযোগ থাকা ওই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তার সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে তার সংক্রমণের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা যতদূর জানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিদেশে ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।’

কর্মকর্তারা শুক্রবার ওই ব্যক্তির অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে পারেন। পরদিন শনিবার তারা নিশ্চিত হন, এটি আসলে মাংকিপক্স সংক্রমণ।

এ নিয়ে মোট ১৪টি দেশে ৮০ জনেরও বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আরও অর্ধশত মানুষ আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই সংক্রমণ অস্বাভাবিক। কারণ এগুলো এমন সব দেশে ঘটছে যেগুলো এ ভাইরাসটির স্বাভাবিক আবাসস্থল নয়।

ইতোমধ্যে ১০টি ইউরোপিয়ান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় মাংকিপক্স সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ইউরোপের যে দেশগুলোতে শনাক্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।

মাংকিপক্স এমন একটি ভাইরাসবাহিত রোগ যা সাধারণত মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এটি খুব সহজে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে না। মনে করা হয়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি ছড়ানোর সম্ভাবনা কম।

এখনও পর্যন্ত মাংকিপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনও টিকা নেই। তবে গুটিবসন্তের টিকা নিলে তা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকতে পারে। কারণ এই দুইটি ভাইরাসের অনেক মিল আছে।

বিজ্ঞানীরা ‘বিস্মিত’

বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির অভিজ্ঞতার পর মাংকিপক্সের খবর শুনে যারা উদ্বিগ্ন বোধ করছেন তাদের স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার যে, এটা কোভিডের মতো কিছু নয়। এ ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে ‘অনেকটা সময়ের জন্য ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে’ আসার দরকার হয়।

যে বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে তা হলো, আগে কারও মাংকিপক্স হলে তার সঙ্গে পশ্চিম বা মধ্য আফ্রিকার সংযোগ সহজেই বের করা যেতো। কিন্তু এবার এই প্রথমবারের মতো ভাইরাসটি এমন লোকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যাদের সঙ্গে ওই দুইটি অঞ্চলের কোনও স্পষ্ট যোগাযোগ দেখা যাচ্ছে না। এখন যাদের মাংকিপক্স হচ্ছে তারা কোথা থেকে সংক্রমিত হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়।

যৌন আচরণের সঙ্গে সম্পর্ক?

যারা মাংকিপক্সে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের অনেকেই সমকামী বা উভকামী তরুণ বা যুবক। যৌন ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মাংকিপক্স ছড়াচ্ছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই যৌনাঙ্গ এবং তার আশপাশের জায়গায় গুটি হতে দেখা গেছে।

জেমস গ্যালাহার বলছেন, কেন সমকামী-উভকামী পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। এটা কি শুধুই ঘটনাচক্রে এমন হচ্ছে, নাকি যৌন আচরণের ফলে ভাইরাসটি সহজে ছড়াতে পারছে - তাও স্পষ্ট নয়। মাংকিপক্স সংক্রমিত কারও ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে তা অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। ফাটা বা কাটা চামড়া, চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে মানুষের দেহে ঢুকতে পারে ভাইরাসটি। সূত্র: এনডিটিভি, বিবিসি।