রাশিয়া কি ইউক্রেনের শস্য বিক্রি করছে?

দখলকৃত দক্ষিণ ইউক্রেনে মস্কোর নিযুক্ত এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনের শস্য বিদেশে পাঠাচ্ছে রাশিয়া। এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর আগে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন তাদের ছয় লাখ টন শস্য রাশিয়া চুরি করেছে এবং এর কিছু অংশ রফতানি করে দিয়েছে। তবে শস্য চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের মজুত করা শস্য হাতে পাওয়া আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি হয়ে উঠেছে। দেশটি থেকে প্রতি বছর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে লাখ লাখ টন শস্য রফতানি করা হয়। কিন্তু ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো রুশ নৌবাহিনী অবরুদ্ধ করে রাখায় এই রফতানি এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর রাশিয়া বলছে রফতানি ফের শুরু করতে হলে ইউক্রেনকে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলীয় করিডোর থেকে অবশ্যই মাইন অপসারণ করতে হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেনের চুরি করা গম আফ্রিকার খরা কবলিত দেশগুলোতে বিক্রির চেষ্টা করছে রাশিয়া। মে মাসের মাঝামাঝি সময় ১৪টি দেশকে এই বিষয়ে সতর্ক করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশের বেশিরভাগই আফ্রিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথির বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে ইউক্রেনের শস্য বোঝাই করে দেশটির কাছের বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে রাশিয়ার কার্গো জাহাজগুলো।

যা বলছে রাশিয়ানরা?

রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়েভজেনি বালিটস্কি বলেন, ক্রিমিয়ার উদ্দেশ্যে মালবাহী ট্রেনভর্তি শস্য এই অঞ্চল ছেড়ে গেছে। এই অঞ্চলটি রাশিয়া ২০১৪ সালে দখল করে। সেখান থেকে এসব শস্য মধ্যপ্রাচ্যে যাবে বলেও জানান তিনি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, মূল চুক্তি শেষ হয়েছে তুরস্কের সঙ্গে। তবে এর বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

ক্রিমিয়ায় রুশ দখলদার কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ওলেগ ক্রিয়ুচকোভ জানান, জাপোরিজ্জিয়া শহরের মেলিটোপোল থেকে শস্য বোঝাই ১১টি ওয়াগন ক্রিমিয়ায় পৌঁছেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ এর সঙ্গে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, এসব শস্যের মধ্যে খেরসন অঞ্চলের শস্যও রয়েছে।

শস্য রফতানির সমস্যা নিয়ে বুধবার আঙ্কারায় আলোচনা করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। তবে এই আলোচনায় কোনও অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেনের গম রফতানিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন ল্যাভরভ। তিনি বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে ওদেসা এবং অন্য বন্দরের করিডোরগুলো থেকে ইউক্রেন মাইন অপসারণ করছে না।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেন এসব করিডোর থেকে মাইন অপসারণ করতে পারে না কারণ রাশিয়া ‘এসব শস্য করিডোর ব্যবহার করে দক্ষিণ ইউক্রেনে হামলা চালাবে’।

খাদ্য সংকটের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকেও দায়ী করেছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমারা বলছে রাশিয়া খাদ্য সরবরাহকে অস্ত্র বানাচ্ছে। অন্যদিকে নিরাপদ সামুদ্রিক করিডোর তৈরির চুক্তির মধ্যস্ততা করছে তুরস্ক।

যা বলছে ইউক্রেনীয়রা?

গত সপ্তাহে তুরস্কে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাসিল বোদনার বলেছেন, ক্রিমিয়া থেকে চুরি করা শস্য রফতানি করেছে রাশিয়া আর এগুলোর গন্তব্যের মধ্যে তুরস্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাহায্যের জন্য তুরস্কের কাছে আবেদন করেছি এবং তুরস্কের পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে, যারা শস্য চুরি এবং বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করছি’।

ইউক্রেনের শস্য অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মাইকোলা গর্বাচভ সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের বন্দর থেকে রফতানি ফের শুরু না হলে জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হতে যাওয়া পরবর্তী ফসল তোলার মৌসুমের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

মাইকোলা গর্বাচভ বলেন, আগামী বছর ইউক্রেনের শস্য রফতানি ২ কোটি টনে সীমিত রাখা হবে। সড়ক, নদী এবং রেলপথে এসব রফতানি করা হবে। গত বছর দেশটির রফতানির পরিমাণ ছিলো ৪ কোটি ৪৭ লাখ টন।

এটা কেন এতো জরুরি আন্তর্জাতিক ইস্যু?

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বিশ্বব্যাপী শস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি ও সারের দাম বেড়েছে। এর একটি অংশের জন্য রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও দায়ী।

বিশ্বজুড়ে গম সরবরাহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের যোগান যৌথভাবে দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। আর ইউক্রেনের যোগান দেয় প্রায় দশ শতাংশ।

২০১৯ সালে বিশ্বের ভুট্টা সরবরাহের ১৬ শতাংশের যোগান দেয় ইউক্রেন আর সূর্যমূখী তেলের ৪২ শতাংশ। এই হিসেব জাতিসংঘের।

ইউক্রেনে বর্তমান অবরোধ এবং কিছু দেশ শস্য মজুত করায় ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত দেশগুলোতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সোমালিয়ায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মকর্তা পেট্রোক উইলটন বলেছেন, হর্ন অব আফ্রিকায় খরা ইতোমধ্যে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘টানা চারটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়নি। ১৫ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষ, বছরের শেষ নাগাদ বেড়ে তা ২০ মিলিয়ন হবে’।

সূত্র: বিবিসি