খেরসন থেকে রুশদের তাড়াতে পারবে ইউক্রেন?

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আক্রমণকারী রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে বড় আকারের পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের আশা, এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন থেকে দখলদার রুশদের তাড়িয়ে ক্রিমিয়া যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের কামান দল, স্পেশাল ফোর্স ও সমর্থকরা পাল্টা হামলা চালানোর পটভূমি তৈরি করেছে। তারা রুশদের দখলে থাকা কেন্দ্র, গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন ও সেতু ধ্বংস করেছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে সেনা ও রসদ পৌঁছেছে। যে রণক্ষেত্রটি মাইকোলাইভ ও খেরসন শহরের মাঝামাঝিতে অবস্থিত।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি ওয়ার-এর মতে, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা হামলা হয়ত শুরু হয়েই গেছে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, খেরসনকে পূর্ণ মুক্ত করতে তার বাহিনী ধাপে ধাপে এগোচ্ছে।

ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিই জাগোরোডনিউক বলেছেন, ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের জন্য রুশ সেনাদের যত দ্রুত সম্ভব তাড়িয়ে দেওয়া জরুরি।

আর ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্ডার খারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের পাল্টা হামলা সফল হওয়ার দারুণ সুযোগ রয়েছে।

 

পাল্টা হামলার প্রস্তুতি

ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা থিংক ট্যাংক প্রিজম-এর নিরাপত্তা গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক হান্না শেলেস্ট মনে করেন, ইউক্রেনের পাল্টা হামলার জন্য খেরসন একটি যৌক্তিক লক্ষ্য।

তিনি বলেন, সব ভূখণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনও উপায়ে কোনও এলাকাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না। এটি হলো আমাদের পক্ষে এখন যা করা সম্ভব তা করছি।

উত্তরের রণক্ষেত্র খারকিভের কাছে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি। এতে করে রুশ সেনাদের সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ভালো। পূর্ব দিকে, রাশিয়া সেনা ও অস্ত্র জড়ো করেছে ডনবাসে আক্রমণের জন্য। এখানে রুশরা সীমিত সাফল্য পাচ্ছে।

কিন্তু দক্ষিণে আক্রমণ শুরুর প্রথম সপ্তাহ বাদ দিলে রুশ সেনাদের কোনও অগ্রগতি ছিল না। ক্রিমিয়া থেকে সাপ্লাই লাইন অনেক বিস্তৃত। ডনবাসে মনোযোগ দেওয়ায় এখানে রুশ সেনাদের অবস্থান কিছুটা দুর্বল। এছাড়া দখলদার কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমাতে হিমশিম খাচ্ছে।

নতুন করে পাওয়া দূরপাল্লার পশ্চিমা কামান ব্যবস্থা– বিশেষ করে মার্কিন নির্মিত হিমার্স ও নির্ভুল আঘাতে সক্ষম গোলা ৫০ মাইল দূরে আঘাতে সক্ষম। এর ফলে ইউক্রেনীয় সেনারা দূর থেকে রাশিয়ার অবস্থান, অস্ত্র গুদাম, জ্বালানি ও জরুরি রসদে হামলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। খেরসনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে রাশিয়ার জন্য এগুলো অত্যাবশ্যক। ইউক্রেন এগুলোতেই আঘাত করতে শুরু করেছে।

ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে হিমার্স দিয়ে রাশিয়ার ৫০টি গোলাবারুদের গুদাম ও জ্বালানি ডিপো ধ্বংস করেছে ইউক্রেনের সেনারা। এই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনীয়রা ইনহুলেতস নদীর তিনটি সেতু ধ্বংস করেছে। এই নদীটি খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবাহিত।

মঙ্গলবার রাতে ইউক্রেনের সেনারা আন্তোনিভস্কি সেতুতে ১২ বারের বেশিবার আঘাত করেছে। এতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দখলদার রুশবাহিনী বাধ্য হয়েছে সেতুটি বন্ধ করে দিতে।

মঙ্গলবারের হামলার আগে শেলেস্ট বলেছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো রাশিয়ার জন্য সতর্কবার্তা। তারা এসব সেতুর ওপর নির্ভরশীল। ইউক্রেনীয়রা শুধু যে এই সেতুগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে তা নয়, আমরা দেখিয়ে দিয়েছি তা নিপূণভাবে করতে পারি। এর মানসিক প্রভাব রয়েছে।

ইউক্রেনীয় সরকারের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলেক্সান্ডার খারা উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণাঞ্চলে রুশ সেনাদের নৈতিক অবস্থার কারণে পাল্টা হামলার সফল হওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, রুশদের মনোবল খুব দুর্বল, রসদ সমস্যা রয়েছে এবং আছে হিমার্সের আতঙ্ক।

খেরসনে ইউক্রেনপন্থীদের কর্মকাণ্ডও রুশদের মনোবল দুর্বল করছে। রুশদের সহযোগিতাকারী শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে এবং রুশ সেনাদের ওপর নিয়মিত হামলা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রতিরোধের শক্তির কথা তুলে ধরে শেলেস্ট বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে ২০১৪ সালে আমরা ডনবাসে যা করেছিলাম সেটি থেকে খেরসনকে আলাদা করে দিচ্ছে।

সূত্র: নিউজউইক