‘কয়লার রাজা’ পোল্যান্ডে জ্বালানি কিনতে দীর্ঘ লাইন

পোল্যান্ডের লুবেলস্কি ওয়েগিয়েল বোগডাঙ্কা কয়লা খনির অবস্থান দেশটির রাজধানী ওয়ারশ থেকে ১৯৭ কিলোমিটার দূরে। সেখানে ডজন ডজন গাড়ি ও ট্রাকের সারি সহজেই যে কারও চোখে পড়বে। কয়লা কিনতে এই দীর্ঘ লাইন মূলত বিভিন্ন বাড়ির মালিকদের। আসন্ন শীতে সম্ভাব্য জ্বালানি ঘাটতির শঙ্কায় আগেভাগেই তারা সেখানে জড়ো হয়েছেন। এজন্য দিন-রাত সারিবদ্ধ হয়ে সেখানে অপেক্ষা তাদের।

৫৭ বছরের একজন পেনশনভোগী আর্তুর। মঙ্গলবার প্রায় ৩০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য কয়লা কিনতে গিয়েছিলেন তিনি। ট্রাক, ট্র্যাক্টর টোয়িং ট্রেলার এবং প্রাইভেট কারের সারিতে নিজের ছোট লাল হ্যাচব্যাকে তিন রাত ঘুমাতে হয়েছে তাকে। সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আজ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও পানির ব্যবস্থা নেই।

তার ভাষায়, ‘এটা অকল্পনীয়। লোকজন তাদের গাড়িতে ঘুমাচ্ছে। আমার কমিউনিস্ট আমলের কথা মনে পড়ে। কিন্তু এটা মাথায় আসেনি যে, আমরা আরও খারাপের দিকে যেতে পারি।’

আর্তুরের পরিবার একা নয়। ৩৮ লাখ মানুষের দেশ পোল্যান্ডে ঘর গরম করার জন্য লোকজন কয়লার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন একদিকে এর ঘাটতি, অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধি। মূলত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ঘটনায় রুশ কয়লার ওপর পোল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

পোল্যান্ড প্রতি বছর তার নিজস্ব খনি থেকে ৫০ মিলিয়ন টনেরও বেশি  কয়লা উৎপাদন করে। তবে ঘরবাড়িতে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা কয়লার চাহিদা বেশি। আর এই আমদানিকৃত কয়লার অধিকাংশই আসে রাশিয়া থেকে। মূলত প্রতিযোগিতামূলক দামের পাশাপাশি রুশ কয়লা ঘরে ব্যবহারের জন্য বেশি উপযোগী হওয়ায় এটিই লোকজনের অধিক পছন্দ। পোল্যান্ডে এটি গৃহস্থালির একটি প্রধান জিনিসে পরিণত হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা বোগডাঙ্কা এবং অন্যান্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত খনিগুলোকে সীমিত পরিসরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্রেতাদের জ্বালানি সরবরাহে বাধ্য করেছে।

নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি আর্তুর। তিনি জানিয়েছেন, তার পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত যাবতীয় জ্বালানি একবারে তোলার আশায় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি।

খনিটি শুক্রবার প্রায় ২৫০ পরিবারের জন্য জ্বালানি বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। বোগডাঙ্কা খনির একজন মুখপাত্র ডোরোটা চোমা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অপেক্ষামানদের চাপ কমাতে বন্ধের দিনগুলোতেও বিক্রি অব্যাহত রাখবেন তারা।

পোল্যাণ্ডের অন্য সব কয়লা খনির মতো বোগডাঙ্কাও সাধারণত তাদের উৎপাদিত বেশিরভাগ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বিক্রি করে থাকে। গত বছর তারা খুচরা ক্রেতাদের কাছে তাদের মোট আউটপুটের এক শতাংশেরও কম বিক্রি করেছে। স্বভাবতই খুচরা ক্রেতাদের কাছে সরাসরি জ্বালানি বিক্রির মতো পর্যাপ্ত লজিস্টিকসও তাদের নেই।

পোলিশ কয়লা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের প্রধান লুকাস হরবাকজ। তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে যখন মস্কো সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য রেলপথ ব্যবহার শুরু করে তখন থেকেই রাশিয়া থেকে আমদানি কমানো শুরু হয়। তবে ঘাটতির প্রধান কারণ হলো নিষেধাজ্ঞা যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এটি বাজারকে উল্টে দিয়েছে।