ইউক্রেনের চীন ‘জটিলতা’

ইউক্রেনে আট মাস আগে রাশিয়া আক্রমণের পর চীন একটি কূটনৈতিক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের পথ বেছে নিয়েছে। রুশ আক্রমণের নিন্দা জানায়নি কিংবা ইউক্রেনীয়দের সহযোগিতা করা থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু কিয়েভ নিজেও সংকটপূর্ণ পথে রয়েছে। তারা বেইজিংয়ের ‘রেড লাইন’-এর কাছাকাছি সাবধানী পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের প্রতি সংশয় তুলে ধরছে পশ্চিমাদের কাছে।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে না হলেও আদর্শগতভাবে ইউক্রেন পশ্চিমা শিবিরে অবস্থান করছে। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সংঘাতে চীনের অবস্থান নিয়ে ইউক্রেন পরিকল্পিতভাবে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ আগেও ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের বিষয়ে মার্কিন ও তাদের মিত্রদের গোয়েন্দা তথ্য উড়িয়ে দিয়েছিল বেইজিং। কিন্তু আক্রমণ শুরুর পর চীন রক্ষণাত্মক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। তারা দাবি করে, মস্কোর পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু জানা ছিল না। রুশ সামরিক পরিকল্পনায় সহযোগিতার ইঙ্গিতও প্রত্যাখ্যান করা হয়।

চীন দাবি করে আসছে, চলমান সংঘাতে তারা কোনও পক্ষ নেই। রুশ নেতৃত্বের ওপর প্রভাব বিস্তারে পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় ধারণাকেও তারা খারিজ করেছে। কিন্তু তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান শুধু কূটনৈতিক। চীনে বেইজিংয়ের প্রোপাগাণ্ড ইউনিট মূলত মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে ক্রেমলিনের অবস্থানের প্রতি সহানুভুতিশীল এবং যুদ্ধের কারণ হিসেবে মার্কিন আধিপত্যকে দায়ী করছে।

এই বিষয়ে ইউক্রেনের বলার মতোও খুব বেশি কিছু নেই। চীনা অবস্থানের সমালোচনা করছেন ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের নেতারা। কিয়েভ মূলত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি যাতে হতাশ না হয় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে ইউক্রেনের রফতানির ১৫ শতাংশ যাচ্ছে চীনে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা মনে করছেন, চীনকে এভাবে তাদের পাশে রাখতে পারলে রাশিয়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে সংঘাতের তীব্রতা বাড়ানো থেকে বিরত থাকবে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সতর্ক কূটনৈতিক পথে হাঁটছেন। ইউরোপীয় নেতাদের সমালোচনায় যেভাবে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলছেন তিনি চীনের ক্ষেত্রে তেমন দেখা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, বেইজিংয়ের সহযোগিতায় করতে রাজি আছে কিয়েভ। অতীতে জেলেনস্কি চীনকে ভূরাজনৈতিক হুমকি বিবেচনা না করার কথা বলেছেন। 

উপদেষ্টা বলছেন, কিয়েভের দুটি অগ্রাধিকার রয়েছে। রাশিয়াকে পিছু হটানো এবং অংশীদারিত্ব তৈরি করা। ইউক্রেনের জন্য চীন একটি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার। এখন চীন যদি রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে তাহলে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে। কিন্তু আমরা মনে করি, এটি সম্ভব না। পুতিনের দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে তারা নিবিড়ভাবে জড়িত হতে চায় না।

কিয়েভভিত্তিক নিউ জিওপলিটিকস রিসার্চ নেটওয়ার্কের এশিয়া শাখা প্রধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউরি পইতা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ইউক্রেনের নীতিনির্ধারক মহলে নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ধরে রেখেছে চীন। সাধারণত, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সামরিক প্রযুক্তি বিষয়ে অংশীদারিত্ব ইউক্রেন-চীন সম্পর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ইউক্রেনও চীনকে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে চীনকে বিবেচনা করে আসছে।

পইতার মতে, ইউক্রেনীয় সরকারের এই অবস্থানের খুব একটা বদল ঘটেনি।

সূত্র: নিউজউইক