পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দেখছে না ইউক্রেন

রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতারা একটি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ৯ মাস দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান করতে পারেন, কয়েক দিন ধরে এমন একটা জল্পনা ছড়াচ্ছে। যদিও উভয় সেনাবাহিনীর বর্তমান বিন্যাসের কারণে একটি যুদ্ধবিরতি এই সংঘাতকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। আর যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর পিছিয়ে পড়ার কারণে ইউক্রেন কোনোভাবে যুদ্ধবিরতিতে যেতে চায় না। কিয়েভ মনে করছে, এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে রাশিয়ার সুবিধা হবে।

ইউক্রেনে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ব্যর্থতার কারণে কল্পিত যুদ্ধবিরতি পুতিনের জন্য একটি বস্তুনিষ্ঠ উপহার হবে।

বর্তমান আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ডিরেক্টরের দায়িত্বে থাকা জন হার্বস্ট বলেন, ইউক্রেন যেসব কারণে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে সেগুলোর মধ্যে নিশ্চিতভাবে একটি কারণ হলো, এর ফলে রাশিয়া নিজেদের সেনাদের পুনরায় সংগঠিত করার সুযোগ পাবে এবং নিজেদের সুবিধামতো সময়ে আবার সামরিক অভিযান শুরু করতে পারবে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করা রাশিয়া যদি মুখরক্ষার জন্য উপায়ের খোঁজ করে তাহলে হয়তো একটি কূটনৈতিক সমাধান আসতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রেমলিন কর্মকর্তারা এমন কোনও ইঙ্গিত দেননি যাতে ইউক্রেনীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই বন্ধে আন্তরিক তারা।

হার্বস্ট বলেন, ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকদের মতো আমার মনে কোনও সন্দেহ নাই। সামরিক ব্যর্থতার পরও যুদ্ধের শুরুতে পুতিনের যে লক্ষ্য ছিল তা এখনও অটুট রয়েছে–তারা ইউক্রেনে কার্যকর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চায়।

পুতিন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে ধারণাটিকে কিয়েভের কর্মকর্তারা সময়ক্ষেপণ এবং বিভক্তি তৈরির উপায় হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ক এক উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো বলেন, রাশিয়া আলোচনার স্বপ্ন দেখছে। কারণ, পরাজয়ের কাছাকাছি থাকা পক্ষই আলোচনা চায়।

তিনি আরও বলেন, পুতিন ক্রিমিয়া, অপর দখলকৃত অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে রাখতে চান। পুতিন চান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হোক এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের কোনও ক্ষতিপূরণ তিনি দিতে চান না। কিন্তু এমন আলোচনায় যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য পেতে থাকা ইউক্রেনের কী লাভ?

গেরাশচেঙ্কো বলেন, পুতিন যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। রাশিয়া বুঝতে পারছে তাদের জটিল সামরিক কাঠামো যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক জোট গঠন করে ইউক্রেনকে দেওয়া সহযোগিতার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না।

তিনি বলেন, কিন্তু যদি পশ্চিমা অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ হয়, রাশিয়াকে যদি নিজেদের সেনাবাহিনীকে অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে পুতিন সুবিধাজনক সময়ে যেকোনও মুহূর্তে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবেন।

তার মতে, ইউক্রেনীয় জনগণ রাশিয়ার দখলকৃত সব ভূখণ্ড ফেরত পাওয়া, ক্ষতিপূরণ এবং পরে যাতে রাশিয়া আবার আক্রমণ না করে এমন কিছু ছাড়া আলোচনার কোনও শর্ত মানবে না।

গেরাশচেঙ্কো বলেন, পুতিন এসব পূর্ব শর্ত মেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আলোচনায় বসা অসম্ভব।

পশ্চিমারা দ্রুত সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইলে ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন গেরাশচেঙ্কো।

সূত্র: নিউজউইক