সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ তুরস্ক

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তুরস্ক। এ ঘটনায় সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত আঙ্কারা সফর বাতিল করেছে দেশটি। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর বলেছেন, ওই সফরের আর কোনও গুরুত্ব নেই। এ ঘটনায় আঙ্কারায় নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকেও তলব করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে উগ্র ডানপন্থীদের পবিত্র কোরআন পোড়ানোর নিন্দা জানিয়েছে আঙ্কারা। সুইডেনে কুর্দি অ্যাক্টিভিস্টদের বিক্ষোভেরও সমালোচনা করেছে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বাস্তবতায় ইউরোপজুড়ে আতঙ্ক বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করে সুইডেন। নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে জোটের বিদ্যমান সদস্যদের সর্বসম্মত সমর্থন প্রয়োজন। তবে স্টকহোমে সাম্প্রতিক ঘটনার পর শনিবার আঙ্কারা জানিয়েছে, ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার জন্য সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করা হয়েছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কোরআন পোড়ানোর কাজটি পরিচালনা করেন ড্যানিশ উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের নেতা রাসমুস পালুদান। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে পবিত্র রমজান মাসে পালুদানের কোরআন পোড়ানোর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। সর্বশেষ শনিবার (২১ জানুয়ারি) পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই তুরস্কের দূতাবাসের সামনে একটি লাইটার দিয়ে কোরআন শরিফে অগ্নিসংযোগ করে পালুদান।

পালুদান বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়, তাহলে আপনাকে অন্য কোথাও থাকতে হবে।’

তাৎক্ষণিকভাবে এক বিবৃতিতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার ঘটনায় সবচেয়ে কঠিন ভাষায় নিন্দা জানাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এই ইসলামবিদ্বেষী কাজের অনুমতি দেওয়া সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু সুইডিশ কর্তৃপক্ষের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বর্ণবাদী তৎপরতা। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এ ঘটনা ‘সুস্পষ্টভাবে বিদ্বেষমূলক অপরাধ’ অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যাবতীয় সতর্কতা সত্ত্বেও এই পদক্ষেপের অনুমতি দেওয়া বিদ্বেষমূলক অপরাধ ও ইসলামফোবিয়াকে উৎসাহিত করছে। পবিত্র মূল্যবোধের ওপর আঘাত কোনও স্বাধীনতা নয়, এটি আধুনিক বর্বরতা।’

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রিয়াদ সংলাপ, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ প্রচারের আহ্বান জানায় এবং ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে। জর্ডান ও কুয়েতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ পবিত্র কোরআন পোড়ানোর নিন্দা জানিয়েছে।