ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘জ্বালানি যুদ্ধনীতি’ কতটা সফল?

প্রায় এক মাসের মধ্যে বুধবার দিবাগত রাতে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গত বছর অক্টোবরের শুরুতে ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা শুরু করে রাশিয়া। গত মাসেও বিরতি দিয়ে বিদ্যুৎ অবকাঠামোকে নিশানা বানিয়েছে রুশ সেবাহিনী। কিন্তু বুধবারের আগে ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতি।

২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার বর্ষপূর্তির দিনে ইউক্রেনের বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এমন কিছু রাশিয়ার কৌশল ছিল না আদৌ, সম্ভবত সংবাদমাধ্যমের প্রত্যাশা ছিল এমনটি।

তবে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার আক্রমণ তাৎপর্যপূর্ণ। এমন সময় রাশিয়া মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো যখন অনেক পশ্চিমা কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে, এমন আক্রমণ পরিচালনার মতো নির্ভুল আঘাতে সক্ষম অস্ত্রের ঘাটতি রয়েছে রাশিয়ার। বিশেষ করে এমন আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেপণাস্ত্র স্বল্পতায় থাকতে পারে রাশিয়া।

এক পশ্চিমা কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেছিলেন, একটি আক্রমণের কর্ম পরিকল্পনা তৈরির আগে তাদেরকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্ভুল আঘাতে সক্ষম অস্ত্র পেতে হবে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও ক্রমশ রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করতে পারদর্শী হয়ে উঠছে।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, রাশিয়ার ছোড়া বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও অর্ধেক ড্রোন।

ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুজনি বলেছেন, আরও আটটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে পরিকল্পিত পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে।

তবে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া তথ্যে এটি নিশ্চিত যে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দূরপাল্লার কেএইচ-২২ জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র অনেক উঁচু থেকে নিশানায় আঘাতে হানে, এগুলো প্রতিহত করা কঠিন। এস-৩০০ বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। এগুলোকে আক্রমণের জন্য তৈরি করা না হলেও গত ছয় মাস ধরে রাশিয়া এই কাজে ব্যবহার করছে।

সামরিক বিশ্লেষকরা সর্বশেষ প্রাপ্ত পর্যালোচনা করবেন। তারা রাশিয়ার ব্যবহৃত অস্ত্র থেকে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবেন মস্কোর কৌশল ও অস্ত্রের মজুত সম্পর্কে।

বুধবার দিবাগত রাতের আক্রমণের আগে পর্যবেক্ষকরা ভাবতে শুরু করেছিলেন রাশিয়া হয়ত কার্যকর নয় এমন নীতি বাস্তবায়নে অটল থাকবে।  

গত ছয় মাসে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও দেশটি অচল হয়ে যায়নি। বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় নাগরিক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতি, দুর্ভোগ ও সাময়িক বিপদে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

অসংখ্য ট্রান্সফর্মা, সুইচ ও জ্বালানি অবকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হামলায় নষ্ট হওয়ার পরও ইউক্রেনের প্রকৌশলীরা দেশজুড়ে বিদ্যুতের প্রবাহ জারি রেখেছেন।

রাজধানী কিয়েভসহ অপর শহরগুলোতে সম্প্রতি সড়কবাতি পুনরায় জ্বলতে দেখা গেছে। এতে পথচারীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। সড়কবাতি না থাকলে মোবাইল ফোনে থাকা আলোর ভরসাতেই তাদের পথ চলতে হচ্ছিল।

কিন্তু পরিস্থিতি অনিশ্চিত রয়ে গেছে। কর্মকর্তারা জানেন, রাশিয়া এখনও ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করার সক্ষমতা রাখে।

বিবিসি অবলম্বনে।