ইউক্রেনকে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহের পরিকল্পনা জানালো পোল্যান্ড

ইউক্রেনে চলমান রুশবিরোধী যুদ্ধে কিয়েভকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে পোল্যান্ড ও অপর ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ওয়ারশ। চলতি বসন্তের শেষ দিকে ইউক্রেন যে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাতে এই যুদ্ধবিমান সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ না করতে সতর্ক করে আসছে রাশিয়া। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ খবর জানিয়েছে।

পোল্যান্ডের সরকার এই সপ্তাহে বলেছে, কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের একটি জোট তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা সোভিয়েত আমলে নির্মিত মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে রাজি। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাতিউজ মোরাভিয়েকি বলেছিলেন, ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের মিগ-২৯ ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে পারবে।

পোলিশ ব্যুরো অব ন্যাশনাল সিকিউরিটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে 'শুরু হিসেবে' ইউক্রেনকে ৪-৫টি যুদ্ধবিমান দিতে পারে পোল্যান্ড।

বৃহস্পতিবার সরকারের মুখপাত্র পিওতর মুলাল বলেছেন, এতে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না। রুশদের সব সময় আমাদের সীমান্ত থেকে দূরে রাখব আমরা।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে বহুমুখী ভূমিকা পালনে সক্ষম মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান উড়িয়েছেন ইউক্রেনীয় পাইলটরা। গত ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে কোনও দেশই ইউক্রেনীয় আকাশসীমায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারেনি। এর ফলে উভয় দেশের প্রতিরক্ষায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছে যুদ্ধবিমান চেয়ে আসছে ইউক্রেন। এগুলো পেয়ে গেলে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে।

পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, ইউক্রেনকে মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের কথাও বিবেচনা করছে ওয়ারশ। মার্কিন যুদ্ধবিমান পেলে রুশদের চেয়ে শক্তিতে এগিয়ে থাকবে ইউক্রেন।

অবশ্য মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান উড়ানোর জন্য ইউক্রেনীয় পাইলটকে বেশ কিছু প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে।

ইউক্রেনের পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। রাশিয়ার সেনাদের ওপর আক্রমণ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের সুরক্ষায় এসব ব্যবহৃত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, নিজেদের সীমিত সংখ্যক যুদ্ধবিমানকে রুশ নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড থেকে দূরেই রাখবে কিয়েভ। এর ফলে রুশ সেনাদের গুলিতে ভূপাতিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে কম। তবে নিজেদের বাহিনীর কাছাকাছি অবস্থানে এগুলো থাকবে। যাতে করে পদাতিক বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

ইউক্রেনের কাছে যে কয়টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান রয়েছে সেগুলো মার্কিন এজিএম-৮৮ হাই-স্পিড অ্যান্টি র‍্যাডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র বা হার্মস যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো ৫০ মাইল দূর থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডার ধ্বংস করতে পারে। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এই রাডার দিয়েই পরিচালিত হয়। এগুলো ধ্বংস করতে পারলে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান আকাশে অনেকটা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে।

হার্মস ছাড়াও এসব মিগে মার্কিন জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন-এক্সটেন্ড রেঞ্জ বা জেডিএএম-ইআর বোমা লাগানো হয়েছে। এগুলো নির্ভুল আঘাত করতে সক্ষম ও গাইডেড বোমা। ৪৫ মাইল দূল থেকে এগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।

আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য এসব অস্ত্র পাওয়ার ফলে ইউক্রেন চলমান স্থল যুদ্ধে ধরন পাল্টে দিতে সক্ষম হবে। যুদ্ধটি ত্রিমাত্রা পাবে। তখন রাশিয়া নিজেদের আরও অস্ত্র, সেনা ও সরঞ্জাম মোতায়েন করতে বাধ্য হবে।

ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের ফলে চলমান সংঘাতে আরও জড়িয়ে পড়বে ইউরোপ। পশ্চিমাদের এমনটি করা থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছিলেন পুতিন।