ইউক্রেন ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলে কী ঘটবে?

ক্রিমিয়া উপদ্বীপ পুনরুদ্ধারে সম্ভাব্য ইউক্রেনীয় প্রচেষ্টার ফলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে রুশ বাহিনী। স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণে এ তথ্য প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি আরও রক্তাক্ত হয়ে উঠতে পারে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর আট বছর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করে। ইউক্রেনীয় নেতারা এখন জোর গলায় বলছেন, ১৯৯১ সালের সীমানা ফিরে পেলেই শেষ হবে যুদ্ধ। সোজা কথায় বলতে গেলে, ক্রিমিয়া ফেরত চাইছে ইউক্রেন। জাতিসংঘ এবং ইউক্রেনের সব পশ্চিমা মিত্রদেরও একই চাওয়া।

আল জাজিরার সানাদ নিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাল্টা হামলার শঙ্কায় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ক্রিমিয়া ও এর আশপাশে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে রাশিয়া।

বলা হচ্ছে, ক্রিমিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিস্তৃত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে রুশ সেনারা। তৈরি করা হয়েছে অনেকগুলো পরিখা। বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ ও সম্প্রসারণও করেছে মস্কো।

১ এপ্রিলের ছবিগুলোতে আরও দেখা গেছে, ক্রিমিয়া ঘিরে নৌ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী করেছে রুশ সেনারা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেভাস্তোপল বন্দর। গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটির বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নও করেছেন পুতিন। 

গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার চাকরির সাইটগুলোতে দুর্গ নির্মাণের জন্য কর্মী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিখাগুলো এখনও পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে জনবলের ঘাটতি।

নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল গার্ডিয়ানের জ্যেষ্ঠ ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট জেভ ফেইনটাচ বলেন, ‘একটা পরিখাও সম্পূর্ণ হয়নি। এখনও কাজ চলছে। ক্রিমিয়ার উত্তরাঞ্চলের তৈরি করা পরিখাগুলো দেখে মনে হচ্ছে রাশিয়া সেখানে ইউক্রেনের স্থল আক্রমণের আশঙ্কা করছে। তাই তারা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।’

গত বছর ইউক্রেন ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের অভিযান শুরু করতে পারত। ওই সময় তারা রুশ বাহিনীকে কয়েকটি দখলকৃত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করতে পেরেছিল। ২০২২ সালের জুলাই মাসে সেভাস্তোপোলে রাশিয়ার একটি নৌঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় কিয়েভ। অক্টোবরের শেষ দিকে সিরিজ নৌ ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেনীয় সেনারা। এর ফলে রাশিয়া বাধ্য হয় নিজেদের সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে।

আগস্টে একটি বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রাশিয়ার দশটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়।

ফেইনটাচ বলেন, বিচ্ছিন্ন হামলায় রাশিয়ার কিছু ক্ষয়ক্ষতি করতে পারলেও পুরো ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করা ভিন্ন বিষয়। এমনকি নতুন ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম নিয়েও হামলা চালালে আক্রমণকারীদের জন্য হবে ঝুঁকিপূর্ণ। ক্রিমিয়া এখন কৌশলগতভাবে অনেক বেশি সুরক্ষিত ভূখণ্ড। প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয় সব কিছু রয়েছে। আকাশ সুরক্ষিত, কৃষ্ণ সাগরে রয়েছে রুশ নৌবহর। যদি কোনও আক্রমণ হয় তাহলে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে।

মার্কিন সেনাবাহিনী শীর্ষ জেনারেল মার্ক মাইলি ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের পুরোপুরি বিতাড়িত করাকে ‘খুব কঠিন সামরিক কাজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সূত্র: আল জাজিরা