রণাঙ্গনে কার্যকারিতা হারাচ্ছে ইউক্রেনীয় ড্রোন

রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন কার্যকরভাবে গোয়েন্দা ও সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করে এলেও সম্প্রতি কার্যকারিতা হারাতে বসেছে মনুষ্যবিহীন এসব আকাশযান। ইউক্রেনীয় ড্রোন অভিযানকে বাধাগ্রস্ত করতে রাশিয়া জ্যামিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এছাড়া বাখমুতসহ বিভিন্ন রণক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় ড্রোনের উড্ডয়নের রেঞ্জ কমে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিত উঠে এসেছে।

পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেনের বাখমুত শহরের ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর তিন জন ড্রোন অপারেটর বলেছেন, ইউক্রেনের ব্যবহৃত জনপ্রিয় চীনা ডিজিআই মডেলের ড্রোন সফলভাবে মোকাবিলার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে রাশিয়া।

৩১ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় ড্রোন অপারেটর ইয়ারোস্লাভ বলছেন, রাশিয়া পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং এই বিশেষ ধরনের ড্রোন জ্যামিং ব্যবস্থা নির্মাণ করছে।

ইয়ারোস্লাভ বলেন, সত্যিকার অর্থে আমি মনে করি তিন বা চার মাসের মধ্যে ডিজিআই ড্রোন আমরা ব্যবহার করতে পারবো না।

বাখমুতে ইউক্রেন ডিজিআই ম্যাভিক ৩ কোয়াডকপ্টার বা আরেকটু অত্যাধুনিক ডিজিআই ম্যাট্রিস ৩০টি ব্যবহার করছে। যুক্তরাজ্যে এগুলোর দাম যথাক্রমে ১ হাজার ৩৯৯ পাউন্ড ও ১২ হাজার ৯৮ পাউন্ড। এগুলো ব্যাটারি দিয়ে চালিত। শীতে ব্যাটারির জীনবকাল দেড় ঘণ্টার মতো। তাই তাদের প্রচুর ব্যাটারি মজুত রাখতে হয়।

ইয়ারোস্লাভের সঙ্গে ফ্রন্টলাইনে কাজ করেন মাকসিম নামের আরেক ইউক্রেনীয়। তাদের কাজ হলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রুদের আক্রমণের ওপর নজরদারি চালানো অথবা কামানের মতো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করা। যদিও বাখমুতে মাত্র তিন মাইল দূর থেকে রুশ সেনারা কামান ছুড়ছে।

ইয়ারোস্লাভ বলেন, এখানে রাশিয়ার ছোড়া কামানের গোলা শনাক্ত ও ধ্বংস করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় পাওয়া যায়।

রণক্ষেত্রে ড্রোনের রেঞ্জ কমে এসেছে। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

অনেক সময় ড্রোন অপারেটররা গানারদের নিশানা সংশোধন করতেও সহযোগিতা করেন। মাঝে মধ্যে তারা সশস্ত্র ড্রোনও পরিচালনা করেন। এসব ড্রোন দিয়ে হাজারো ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয়েছে। এগুলোকে যুদ্ধের প্রচারে ব্যবহার করেছে ইউক্রেন।

প্রায় এক বছর আগে ইউক্রেনে ডিজিআই ড্রোন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের দাতাদের পক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক ড্রোন আসছে ইউক্রেনে। এসব ড্রোন স্থানীয় পর্যায়ে কাছাকাছি এলাকায় শত্রুর শক্তি ও অবস্থান নির্ণয় এবং সহজেই গ্রেনেড বহন করার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায়।

কিন্তু ড্রোন অপারেটররা বলছেন, ধীরে ধীরে ডিজিআই ড্রোনের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। রুশ সেনারা তাদের ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধকৌশল জোরদার করছে। এর ফলে ড্রোনগুলোর রেঞ্জ কমে যাচ্ছে। বাখমুতে এসব ড্রোনের রেঞ্জ মাত্র কয়েকশ’ মিটারে নেমে এসেছে। সাধারণত এগুলোর রেঞ্জ ১০ বা ২০ গুণ বেশি।

ইয়ারোস্লাভ বলেন, মাইকোলাইভে আমরা ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ড্রোন ওড়াতে পারতাম। কিন্তু বাখমুতে আমাদের রেঞ্জ মাত্র ৫০০ মিটার। এমনকি দুটি ড্রোন দিয়ে ৫০০ মিটার কভার কঠিন।

ড্রোনের বিধ্বস্ত হওয়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। নিজ বাহিনীর গুলিতেও ভূপাতিত হচ্ছে ইউক্রেনীয় ড্রোন। অনেক সময় একটি ড্রোন একদিনও স্থায়ী হচ্ছে না। অন্য সময় একেকটি ড্রোন সাত মাস পর্যন্ত পরিচালনা করা সম্ভব হতো।

মাকসিম ও ইয়ারোস্লাভের বন্ধু ও খারকিভ থেকে আরেক ড্রোন অপারেটর ইয়েভজেন (৩৮) মনে করেন, রণক্ষেত্রে ডিজিআই ড্রোনের কার্যকারিতা আর খুব বেশি দিন নেই। ম্যাভিকস ড্রোন বিধ্বস্ত হতে শুরু করেছে।