বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে কেন উত্তেজনা বাড়ছে?

বেলারুশিয়ান সামরিক হেলিকপ্টারের কথিত অনুপ্রবেশের অভিযোগের পর বেলারুশ সীমান্তে ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে পোল্যান্ড। দেশটির সরকার বলছে, এই সেনারা রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে পোলিশ ভূখণ্ড রক্ষায় সহযোগিতা করবে।

পোলিশ সরকার  বলছে, ১ আগস্ট বেলারুশের সেনাবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার অল্প উচ্চতায় পোল্যান্ডের ভূখণ্ডের দুই কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করেছে।

বেলারুশের সশস্ত্রবাহিনী বলেছে, ওই সময় তারা সীমান্তে সামরিক মহড়া চালিয়েছে। তাদের হেলিকপ্টার দ্বারা কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। পোল্যান্ডের অভিযোগ সঠিক নয়।

পোলিশ সীমান্তে বিয়েলোভিয়েজার বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেলারুশের পতাকা সম্বলিত দুটি হেলিকপ্টারের ছবি প্রকাশ করেছেন।  

এমন সময় এই সামরিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলো যখন হাজারো অবৈধ অভিবাসীর বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পোল্যান্ডের অভিযোগ, ২০২১ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অভিবাসীদের বেলারুশে আসা এবং সেখান থেকে অবৈধভাবে পোল্যান্ডে প্রবেশের জন্য উৎসাহিত করছে বেলারুশিয়ান সরকার। দুই বছর আগের তুলনায় সীমান্ত অতিক্রমের সংখ্যা কমলেও পোল্যান্ডের বর্ডার গার্ডের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার অভিবাসী বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার।

জুন মাসে রাশিয়ায় ওয়াগনারের ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর বাহিনীটির যোদ্ধাদের একাংশ বেলারুশে চলে আসে। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাথিউজ মোরওয়েইকি বলেছেন, ওয়াগনারের প্রায় ১০০ যোদ্ধার একটি দল বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং পরিস্থিতি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, বেলারুশের ওয়াগনার যোদ্ধারা অভিবাসীর ছদ্মবেশে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারে বা তারা বেলারুশের সীমান্ত রক্ষী হিসেবে হাজির হয়ে আরও অবৈধ অভিবাসীদের পোলিশ ভূখণ্ডে প্রবেশে সাহায্য করতে পারে।

বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পোলিশ সীমান্তের ১০ কিলোমিটার কাছে ওয়াগনার যোদ্ধারা বেলারুশিয়ান সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব ল্যাঙ্কাস্টারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক ড. বারবারা ইয়োক্সন বলেছেন, ভাড়াটে বাহিনী হওয়ার কারণে ওয়াগনার যোদ্ধা সীমান্তে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এই বিশৃঙ্খলার জন্য সরাসরি রাশিয়া ও বেলারুশকে দায়ী করা যাবে না।

পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার সীমান্ত ‘সুয়াল্কি গ্যাপ’ বলে বলে পরিচিত। ৯৫ কিলোমিটার ভূখণ্ড বেলারুশ ও রাশিয়ার ছিটমহল কালিনিনগ্রাদকে যুক্ত করেছে। অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন, যদি রাশিয়া ও ন্যাটো দেশগুলোর মধ্যে কোনও সংঘাত শুরু হয় তাহলে এই ভূখণ্ড গুরুত্বপূর্ণ হবে। বেলারুশকে সঙ্গে নিয়ে রাশিয়া যদি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে এই স্থান দখল করে তাহলে বাল্টিক দেশ লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া ইউরোপে ন্যাটো মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

সীমান্তে কাঁটাতারের বেস্টনি বসিয়েছে পোল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স

ড. ইয়োক্সন বলেন, রাশিয়া ও বেলারুশ সহজে এই ফাঁকা স্থানে অবরোধ বসিয়ে বাল্টিক দেশগুলোকে রক্ষায় ন্যাটো সেনা মোতায়েন ঠেকিয়ে দিতে পারবে।

গত কয়েক বছরে রাশিয়া ও বেলারুশ একাধিক সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ইউক্রেনে আক্রমণকারী রুশ সেনাদের নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বেলারুশ। একই সঙ্গে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে দেশটিতে।

পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেলারুশ সীমান্তে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে ৪ হাজার সরাসরি বর্ডার গার্ডকে সহযোগিতা প্রদান করবে এবং বাকি  ৬ হাজার রিজার্ভ হিসেবে থাকবে। এর আগে জুলাই মাসে সরকার সীমান্তে আরও ১ হাজার সেনা পাঠিয়েছিল।  

অবশ্য কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, পোল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা ওয়াগনার ও বেলারুশের হুমকিকে অতিরঞ্জিত করতে পারেন। কারণ দেশটিতে শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভোটারদের কাছে নিরাপত্তা ইস্যুতে নিজেদের কঠোর হিসেবে হাজির করতে চাইতে পারেন।

সূত্র: বিবিসি