ছারপোকা নিয়ে ফ্রান্সে রাজনৈতিক উত্তেজনা

ফ্রান্সে ক্রমবর্ধমান ছারপোকার ছড়িয়ে পড়ায় সৃষ্ট সংকটে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। প্যারিস সিটি হল বলছে, আগামী বছর অলিম্পিক গেমস শুরু হওয়ার আগে রক্তচোষা ছারপোকা দমন করতে হবে। পরিবহনমন্ত্রী রেল ও বাস পরিচালনা কোম্পানিকে তলব করতে যাচ্ছেন যাতে করে এগুলোর সিটে এসব পোকার বিস্তার ঠেকানো যায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

প্যারিসের স্থানীয় পরিবহণ ব্যবস্থা (মেট্রো), দ্রুতগতির ট্রেন ও শার্ল দ্য গোল বিমানবন্দরে ছারপোকার উপস্থিতির ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর ফ্রান্সজুড়ে আতঙ্ক ও বিরক্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

প্যারিস মেট্রোতে ভ্রমণকারী কয়েকজন বলেছেন, সিটে বসলে ছারপোকার সংস্পর্শে আসার ভয় আছে, তাই আপাতত তারা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করবেন। এর আগে প্যারিসের এক সিনেমাপ্রেমী প্রেক্ষাগৃহে ছারপোকার উপস্থিতির কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তখন প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল কীভাবে তারা আসনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িগুলোর পরিষ্কার করার জন্য কীট নিধন কোম্পানিগুলোর চাহিদা বেড়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিবহণমন্ত্রী ক্লিমেন্ট বিউন বলেছেন, চলতি সপ্তাহে সরকারি পরিবহণ পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোকে তলব করে ছারপোকা মোকাবিলার পদক্ষেপ ও যাত্রীদের সুরক্ষায় আরও করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরবেন।

প্যারিস সিটি হলের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নকে লেখা এক চিঠিতে ছারপোকা নিধনের জন্য একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ইমানুয়েল গ্রেগরি ফ্রেঞ্চ টিভিকে বলেছেন, কেউ নিরাপদ নন। যেকোনও স্থান থেকে এগুলো আপনার সঙ্গে বাড়িতে চলে আসতে পারে। বাড়িতে বংশবৃদ্ধি করে ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত এগুলো শনাক্ত করা যায় না।

তিনি বলেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ফোন কলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেসরকারি কিট নিধন কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক চাহিদা বেড়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। সরকারকে অবশ্যই প্রতিটি পর্যায়ে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ছবি: দ্য লোকাল

গ্রেগরি বলেছেন, এগুলোতে আক্রান্ত হওয়া ভয়াবহ। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর অবস্থা বেশি শোচনীয়। কারণ তারা ব্যয়বহুল বেসরকারি কীট নিধন কোম্পানিগুলোর ফি পরিশোধ করতে পারে না।

১৯৫০-এর দশকে ফ্রান্সের প্রাত্যাহিক জীবনে ছারপোকার উপস্থিতি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে এগুলো আবার দেখা যাচ্ছে। ক্রমেই রক্তচোষা পোকাটি রাসায়নিক প্রতিকার মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে উঠছে।

এগুলোকে বিছানা, পোশাক ও লাগেজে অবস্থান করতে পারে। রাতে বের হয়ে মানুষের রক্ত চুষে। এগুলোর উপস্থিতি মানুষের মানসিক যন্ত্রণা, নির্ঘুম, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার কারণ হতে পারে। ছারপোকার আতঙ্ক নিয়ে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা লে প্যারিসিয়েন প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা এই সমস্যার নাম দিয়েছে, এক ধরনের ‘ঘরোয়া ত্রাস’।

ফ্রান্সের জাতীয় স্বাস্থ্য ও স্যানিটারি কর্তৃপক্ষ আনসেস-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ফ্রান্সের ১১ শতাংশ বাড়িতে ছারপোকার সংক্রমণ ছড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে প্যারিস মেট্রোর ৮ নম্বর লাইনের এক ট্রেন চালক বলেছিলেন, তার বগিতে তিনি ছারপোকা দেখেছেন। পরিবহণ কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ছারপোকার উপস্থিতির বিষয়টি একেবারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু ওই ট্রেনটি সরিয়ে নেওয়া হয় সতর্কতার অংশ হিসেবে। ট্রেন পরিচালনাকারীরা বলেছে, নিয়মিত বগি ও আসনগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

একটি বামপন্থি দলের প্রধান ম্যাথিল্ড প্যানোট বলেছেন, লাখো পরিবারের দুর্ভোগের কারণ এই ছারপোকা। সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ম্যাথিল্ড প্যানোট বলেছেন, তিনি যখন ২০১৯ সালে ছারপোকা দমনে একটি জরুরি জাতীয় পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তখন সবাই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমরা চাই সরকার এটিকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করুক। ব্যক্তিগত সমস্যা হিসেবে জনগণকে নিজেদের এটি মোকাবিলার করার আহ্বান জানানো বন্ধ করতে হবে সরকারকে। এটি একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা, এটি মানসিক সমস্যাও। মানুষ ঘুমাতে পারছে না, তারা ভীতসন্ত্রস্ত বা তাদেরকে বিষণ্নতার ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে।

তিনি বলেছেন, সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পদক্ষেপের সমন্বয় করা, চিকিৎসার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া এবং কাজে আসছে না এমন কিছু রাসায়নিক পণ্য নিষিদ্ধ করা।