হতাশা বাড়ছে জেলেনস্কির

রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রণক্ষেত্রে রাতারাতি সাফল্যের প্রত্যাশাকে অবাস্তব উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রুশবিরোধী পাল্টা আক্রমণে কিয়েভের সেনাদের মন্থর অগ্রগতির কারণে মিত্রদের পক্ষ থেকে সামরিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে এই হতাশা প্রকাশ করলেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

মঙ্গলবার শেষ রাতের এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আধুনিক বিশ্ব দ্রুত সাফল্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে’। তিনি অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনীয় সেনাদের অর্জনকে ‘প্রদত্ত’ হিসেবে মনে করছেন অনেকে।

এমন সময় জেলেনস্কি এই মন্তব্য করলেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কংগ্রেসের কাছ থেকে ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য ১০৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ চেয়েছে। কিন্তু কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা ইউক্রেনকে সহযোগিতার বিরোধিতা করছেন এবং ইসরায়েলের সহযোগিতার অনুরোধ থেকে এটিকে আলাদা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটরদের সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ বাতিল করা হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধে জয়ী হবেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, ইউক্রেনের প্রতি আমাদের আমাদের সমর্থন না থাকলে পুতিন সফল হবেন। আমরা এখন সমর্থন প্রত্যাহার করলে পুতিন আরও শক্তিশালী হবেন। তিনি প্রতিবেশী দেশে যা করতে চাইছেন তা করতে সফল হবেন।

প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রিপাবলিকানদের কাছে ইউক্রেনকে সহযোগিতা বিতর্কিত ইস্যু হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, কিয়েভের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে অনেক বেশি বিনিয়োগ করে ফেলেছে, অথচ অগ্রগতি খুব সামান্য। তারা ইউক্রেনের চেয়ে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েলকে সহযোগিতায় অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রতিনিধি পরিষিদের ৮ সদস্য এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ইউক্রেনে অচলাবস্থায় গড়ানো যুদ্ধে জয়ের কোনও পরিকল্পনা না থাকায়, সেখানে অর্থায়ন করা নিয়ে মার্কিন করদাতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

ইউক্রেনকে সহযোগিতার বিরোধিতাকারীদের সংখ্যা এখনও কংগ্রেসে খুব অল্প হলেও এতে মার্কিন রাজনীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন যে বরাদ্দ চেয়েছে তাতে ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ অচলাবস্থায় গড়ালে তা ইউক্রেনকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করবে।

সংঘাতে লিপ্ত রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়পক্ষ প্রতিদিন প্রচুর গোলাবর্ষণ করছে। বুধবার ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া প্রায় ১২০টি বসতিতে হামলা করেছে। যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ হামলা।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, আসন্ন শীতেও ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা অব্যাহত রাখতে পারে রাশিয়া। কিন্তু তারা এমন আক্রমণ মোকাবিলার জন্য এবার প্রস্তুত। ইতোমধ্যে জ্বালানি স্থাপনাগুলো ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পশ্চিমা মিত্ররা আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে।

একই সঙ্গে কিয়েভের সেনারা পূর্বাঞ্চলীয় আভদিভকা শহরে রুশদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শহরটি দখলে আক্রমণ জোরদার করেছে রুশ সেনারা। তবে এখন পর্যন্ত তারা সফলতা পায়নি। উভয়পক্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান গতিতে রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক মাসে রণক্ষেত্রে বেশি অস্ত্র থাকার সুবিধা পেয়ে যাবে রাশিয়া। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের কাছ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকা ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান ওলেক্সি ডানিলভ বলেন, আমরা যদি আমাদের যৌথ সহযোগিতা অব্যাহত রাখি তাহলে আমরা জিতব। আপনারা যদি আমাদের ছেড়ে যান তাহলে তা আমাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন হবে।

সম্প্রতি জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, বিশ্বের মনোযোগ ইউক্রেন থেকে সরে যাচ্ছে। তবে তিনি ইউক্রেনীয় সেনাদের সাফল্য তুলে ধরছেন। মঙ্গলবারের ভাষণে তিনি কৃষ্ণ সাগরে রুশ বাহিনীকে বিপর্যস্ত করার সাফল্য তুলে ধরে বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের সফলতা পাঠ্য বইয়ে স্থান পাবে।

কিন্তু হতাশার সুরে তিনি আরও বলেছেন, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখন খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে না।