ভারত-পাকিস্তান অশান্তির আবহে আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলো। স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে তাদের নিজস্ব পরিকাঠামো ব্যবস্থা নিয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আরও একবার ঝালাই করে নিচ্ছে তাদের পরিকাঠামোর বিস্তারিত সুলুক সন্ধান। সেই অনুযায়ী তারা স্বাস্থ্য ভবনকে রিপোর্ট দেবে। পাশাপাশি, হাসপাতালগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটগুলোও নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। যাতে কোনও বিদেশি শত্রু ওয়েবসাইট হ্যাক করে নিতে না পারে। রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, ডাক্তার দেখানোর জন্য অনলাইন টিকিট কাটার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী সব স্তরের সরকারি কর্মচারীদের ছুটি বাতিল হয়েছে। যার মধ্যে হাসপাতালগুলোর সব স্তরের কর্মীরাও আছেন।
বাস্তবেই কলকাতা যুদ্ধে কবলিত হোক বা যুদ্ধের প্রস্তুতি মহড়া চলুক হাসপাতালের সব থেকে বড় সমস্যা হলো সেখানে ব্ল্যাকআউট করা যাবে না। কারণ অন্ধকারে রোগীদের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার করা যাবে না। এছাড়া রাজ্যের বেশিরভাগ হাসপাতাল এখন বহুতল উঁচু ভবনে। সেখান থেকে রোগীদের তৎক্ষণাৎ নিচে নামিয়ে আনা যায় কিনা সেই দিকগুলোও ভাবা হচ্ছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. অঞ্জন অধিকারী বলেন, স্বাস্থ্য দফতর থেকে আমাদের পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সব ব্যবস্থা আবার ঝালাই করে নিচ্ছি। কোথায় কত ওষুধ, অক্সিজেন, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্র আছে হিসাব করছি। জরুরি বিভাগ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ারে যদি অতিরিক্ত রোগীর চাপ আসে তাহলে দরকারে আমরা ত্রিপল টানিয়ে চিকিৎসা করতে পারি।
কিন্তু চিন্তা দেখা দিয়েছে ডাক্তার সংখ্যা নিয়ে। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. ইন্দিরা দে পাল বলেন, কোভিডের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে, তাছাড়া জরুরি পরিষেবা হিসেবে আমরা সব সময়ই প্রস্তুত। কিন্তু রোগীর চাপ বাড়লে চিকিৎসক, নার্স যা আছেন তাই দিয়েই চালাতে হবে।
সাধারণত বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের সময় দেখা গেছে হাসপাতালের ওপর আক্রমণ আসে। অথবা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতে হাসপাতালগুলো গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সেগুলোর ওপর আগে থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
চিত্তরঞ্জন সেবা ও শিশু সদনের অধ্যক্ষ ডা. আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের সব থেকে বড় চিন্তা এখানে আড়াইশোটির মতো শিশু ভর্তি থাকে। এছাড়া আছে তাদের মায়েরা। আমরা ছুটি বাতিল করে এখানে আছি। সব রকম পরিস্থিতিতে শিশুদের রক্ষা করবো।
এর আগেই বিশ্ব তথা দেশজুড়ে গেছে কোভিড পরিস্থিতি। সেই আবহে হাসপাতালগুলো মাসের পর মাস জরুরি পরিষেবা দিয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি কেটে গেছে বেশ অনেক দিন। তাই অনেক হাসপাতালের অতিরিক্ত শয্যাগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে আছে। অনেক জায়গায় আবার অক্সিজেন সরবরাহ লাইন জমে গেছে। সেগুলো ঠিক করতে এখন ব্যস্ত তারা। অক্সিজেন পোর্টালগুলো সঠিক মেরামত করার পাশাপাশি রোগীর চাপ বাড়লে তাদের কোথায় রাখা হবে সেদিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মেট্রোরেলের নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ আরও ভেবেছেন যে ওপর থেকে যদি গুলিবর্ষণ হয় তাহলে রোগীদের নিয়ে মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নেবেন তারা।