কমে এসেছে বিদেশি সহযোগিতা, অভিযান পেছাচ্ছে ইউক্রেন

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর এক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওলেক্সান্ডার তারনাভস্কি বলেছেন, রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের সেনারা কামানের গোলার ঘাটতিতে রয়েছে এবং বিদেশি সহযোগিতার ঘাটতির কারণে কয়েকটি সামরিক অভিযান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওলেক্সান্ডার তারনাভস্কি বলেছেন, গোলাবারুদ নিয়ে সংকট রয়েছে। বিশেষ করে সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে তৈরি ১২২ এমএম, ১৫২এমএম কামানোর গোলার ঘাটতি বেশি। এখন পুরো রণক্ষেত্রে এই ঘাটতি রয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং হাঙ্গেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত ৫৪.৫ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা আটকে দেওয়ার পর এই মন্তব্য করলেন ইউক্রেনীয় জেনারেল।

তারনাভস্কি বলেছেন, কামানোর গোলার ঘাটতি একটি বড় সমস্যা এবং বিদেশি সামরিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার কারণে রণক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে।

বিস্তারিত উল্লেখ না করে তিনি বলেছেন, আমাদের যে মজুত আছে তা এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট না। ফলে আমরা সেগুলো পুনরায় বিতরণ করছি। যে-সব পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেগুলো পুনরায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনাগুলো ছোট করে আনতে হচ্ছে, কারণ সেনাদের গোলা সরবরাহ করার প্রয়োজন রয়েছে।

ইউক্রেনীয় জেনারেলের বক্তব্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক সহযোগিতার ওপর কিয়েভের নির্ভরশীলতার চিত্র উঠে আসছে। প্রায় ২২ মাস ধরে দীর্ঘ এক হাজার কিলোমিটার রণক্ষেত্রে রুশদের বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই ইউরোপের বৃহত্তম সংঘাত।

তারনাভস্কি বলেছেন, রুশ সেনারাও গোলাবারুদের সমস্যায় রয়েছে। তবে এই সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত বলেননি।

তিনি বলেছেন, ক্লান্ত ইউক্রেনীয় সেনারা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে কিছু এলাকায় রক্ষণাত্মক অবস্থানে চলে গেছে। কিন্তু অন্যরা আক্রমণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও জয় প্রত্যাশা করছে। কিন্তু রিজার্ভ সেনাদের মোতায়েন ও বিশ্রাম তাদের উপকারে আসবে।

তারনাভস্কি বলেন, কিছু এলাকায় আমরা প্রতিরক্ষায় চলে গেছি এবং কিছু এলাকায় আমাদের আক্রমণ চলমান রয়েছে। গোলাবর্ষণ করে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এই আক্রমণ চলছে। আরও বড় আকারের অভিযানের জন্য আমরা আমাদের রিজার্ভ সেনাদের প্রস্তুত করছি।

কৌশল পাল্টাচ্ছে রাশিয়া

তাভরিয়া অপারেশনাল ইউনিটের কমান্ডার তারনাভস্কি ইউক্রেনের একটি পাল্টা আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে এই ইউনিটটি দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহর থেকে রুশদের পিছু হটিয়ে দেয়। রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের এটিই শেষ বড় ধরনের সাফল্য।

চলতি বছর জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলে ইউক্রেনের আক্রমণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তবে এবার খুব বেশি সফলতা পায়নি ইউক্রেনীয় বাহিনী।

পূর্বাঞ্চলীয় আভদিভকা শহর ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে রুশ সেনারা। অঞ্চলটির প্রতিরক্ষার দায়িত্বও রয়েছে তারনাভস্কির কাঁধে।

তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সেনাদের লক্ষ্য আগের মতো একই রয়েছে। তাদের শুধু কৌশল পাল্টেছে, আক্রমণ অবিরাম চলছে। আভদিভকার পরিস্থিতি প্রতিদিন ও রাতে পাল্টাচ্ছে। রুশ সেনারা নিয়মিত তাদের কৌশল পাল্টাচ্ছে। কিছু এলাকায় আংশিক সফলতা পেয়েছে রাশিয়া। দেড় থেকে দুই কিলোমিটার গভীরে তারা প্রবেশ করেছে।

তারনাভস্কি বলেন, আমি মনে আমরা এই রেখা আজ পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে পেরেছি। আজ শত্রুরা তাদের সংখ্যা দিয়ে আমাদের চেপে ধরেছে। তারা নিজেদের সেনাদের জীবন নিয়ে কখনও ভাবেনি। 

পূর্বাঞ্চলীয় ডোনেস্ক ও লুহানস্কের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য আভদিভকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করে রাশিয়া।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের জন্য অপেক্ষা

চলতি বছর রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই রণক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও সাফল্য পায়নি। যুদ্ধ মূলত অচলাবস্থায় গড়িয়েছে। তারনাভস্কি বলছেন, সবগুলো ব্রিগেড চেষ্টা করছে তাদের সেনাদের কিছু মাত্রায় বিশ্রাম দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, রণক্ষেত্রের সেনাদের নিয়ে এখন আমাদের নির্দিষ্ট জটিলতা রয়েছে। তারা এখন আগের মতো সতেজ নয়, আগের মতো বিশ্রাম নেওয়া হয়। সব কমান্ডারের উচিত বিকল্প সেনা থাকা।

ইউক্রেনীয় জেনারেল বলেছেন, শীত, গাছের আড়ালে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো উভয় বাহিনীর জন্যই চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তিনি বলেন, কিন্তু শীতকালে সামরিক অভিযান পরিচালনার বহু বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। লজিস্টিকস, সরিয়ে আনা এবং সরঞ্জাম ও সেনাদের চলাচল জটিলতায় রয়েছে।

রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ড্রোন হামলা মোকাবিলায় প্রতিরক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে তারা পশ্চিমা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে বলে উল্লেখ করেছেন তারনাভস্কি। তিনি বলেন, এফ-১৬ এর উপস্থিতি ভিন্ন পরিস্থিতি হাজির করবে। পদাতিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমার মতে, সোভিয়েত আমলের জাপোরোজেট গাড়ির তুলনায় এফ-১৬ হলো মার্সিডিজ। সবাই আশায় রয়েছে।