বিশ্বে যেভাবে উদযাপন হচ্ছে এবারের বড়দিন

বিশ্বজুড়ে উদযাপন হচ্ছে খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়েছে উদযাপন। তবে এবারের বড়দিন অন্যান্য বছর থেকে একটু আলাদা। গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে এই উৎসবে।  তাই অনেকটা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যেই এ বছর বড়দিন উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের খ্রিস্টানরা। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এই খবর জানিয়েছে।

একটি অস্থির, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিশ্বে আঞ্চলিক উদ্বেগ এবং ভয়কে দূরে সরিয়ে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টায় এবারের বড়দিন উদযাপন করতে চেয়েছিলেন খিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। বড়দিনের প্রস্তুতিতে সে প্রচেষ্টা চালানো হলেও তেমন কোনও ফল আসেনি। অজানা এক ভয় ও আতঙ্কের মধ্যেই এবার অনাড়ম্বর বড়দিন পালন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খ্রিস্টানরা।

ইউরোপের একটি চার্চে খ্রিস্টানদের বড়দিন উদযাপন। ছবি: এপি

নিউ ইয়র্ক সিটির সেন্ট প্যাট্রিকস ক্যাথেড্রালে মূল কার্যক্রম শুরুর আগে বড়দিনের প্রার্থনায় মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোর কথা সমবেতদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন কার্ডিনাল টিমোথি ডলান।

ইসরায়েলের কিছু অংশ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বড়দিনের প্রত্যাশা করি, আমাদের হৃদয় তখন পবিত্র ভূমিতেই যায়। সেই পবিত্র ভূমি এখন কালো মেঘে ঢেকে আছে, সেই পবিত্র ভূমি কষ্ট পাচ্ছে, সেই পবিত্র ভূমি এখন হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধে ভরা এবং তা বড়দিনের আনন্দকে ম্লান করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’

যিশুর বাল্যকালের প্রতিকী ছবি: এপি

দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অর্থনৈতিক অবরোধে ভুগতে থাকা সিরিয়াতেও বড়দিন উদযাপন হচ্ছে। তবে আগের সে আমেজ আর নেই। রাজধানী দামেস্কে বাড়িঘর ও দোকানগুলো বাহারি আলোকসজ্জায় সাজানো সত্ত্বেও গাজার যুদ্ধ এবং দেশটির কিছু অংশে চলমান সংঘাতগুলো বড়দিনের ছুটি ও উৎসবমুখর পরিবেশকে শান্ত করে দিয়েছে।

বড়দিনের ক্যারোল উপভোগ করতে দামেস্কের উত্তরে অবস্থিত ইয়াব্রউড শহরে জড়ো হয়েছিলেন সেন্ট কনস্টানটাইন এবং হেলেন ক্যাথেড্রালে উপাসকরা। গায়কদলের এক সদস্য ফাদি হোমসি বলেন, ‘এই দুঃখের অবসান ঘটাতে এবং সবার মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে—প্রভু তাদের যা দিয়েছেন তা দিয়েই প্রত্যেকেরই চেষ্টা করা উচিত।’

জেরুজালেমের বেথেলহেমের চার্চ অব নেটিভিটির সামনে এক ধর্মযাজক। ছবি: এপি

গাজা যুদ্ধ এবং প্রতিবেশী ইউক্রেনের উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে বেশিরভাগ ইউরোপীয় অঞ্চলগুলোতে। ঐতিহাসিক ক্যাথেড্রাল এবং মার্কেটগুলোতে আগের মতো মানুষের সেই সমাগম নেই। মুদ্রাস্ফীতির জন্য অনেকেই পারিশ্রমিক পাননি, যা বড়দিন উপলক্ষে কেনাকাটা ও ভোজন আয়োজনে প্রভাব ফেলেছে।

সম্ভাব্য আক্রমণের ইঙ্গিত পাওয়ায় এবার জাকোলনে অবস্থিত জার্মানির ল্যান্ডমার্ক ক্যাথেড্রালে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি রবিবার মধ্যরাতে সেখানে নিরাপত্তা পরীক্ষার মুখোমুখি হন প্রার্থনাকারীরা।

অস্ট্রিয়ার পুলিশ জানিয়েছে ভিয়েনার গির্জা এবং বড়দিনের মার্কেটগুলোর আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সম্ভাব্য একটি সন্ত্রাসী হামলার হুমকি পাওয়ার পরই নিরাপত্তা জোরদার করেন তারা।

বড়দিন উপলক্ষ্যে জার্মানির কোলন শহরে টহল দিচ্ছে পুলিশ: ছবি: এপি

এর আগে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহানসন ৫ ডিসেম্বর সতর্ক করে বলেছিলেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বড়দিনের ছুটিতে ইউরোপে ‘সন্ত্রাসী হামলার বিশাল ঝুঁকি’ রয়েছে। তবে জোহানসন পুলিশ বা নিরাপত্তা তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানাননি।

এদিকে, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে প্রথমবারের মতো ২৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বড়দিন উদযাপন করছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনে বড়দিন পালন করছে একটি পরিবার। ছবি: এপি

পাকিস্তানের পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের জরানওয়ালা শহরে ভয়ের মধ্যে বড়দিন উদযাপন করেছেন খ্রিস্টানরা। গত আগস্টে তাদের বাড়িঘর মুসলমানরা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। তাই বড়দিন আর আগের মতো হবে না বলে মনে করছেন জরানওয়ালার বাসিন্দা রতন ভাট্টি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বাড়ি আলোকসজ্জায় সজ্জিত হতো, তারা দিয়ে সাজানো হতো।

তিনি বলছিলেন, ‘মানুষ এখনও ভয় ও শোকের মধ্যে রয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই দিনটি ভুলে যাওয়া কঠিন।’

পাকিস্তানের ইতিহাসে খ্রিস্টানদের ওপর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হামলার একটি ছিল ওই ঘটনাটি। এ ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দা জানানো হয়েছিল।