৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো ফ্রান্স, ধরপাকড়ে উদ্বেগ কমিউনিটিতে

ফ্রান্সে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের আটক করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটি সূত্রে পাওয়া তথ্যে ইতোমধ্যে অন্তত চারজন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফরাসি সরকারের এমন উদ্যোগের পর দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

ফ্রান্স থেকে গত এক সপ্তাহে বৈধ কাগজপত্রবিহীন অন্তত ১৮ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদক চারজনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। প্রায় ১৫ বাংলাদেশি আটক রয়েছেন ডিটেনশন সেন্টারে। মূলত খাবার ডেলিভারি কর্মী হিসেবে কর্মরতরা রেল স্টেশন ও রাস্তায় ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র চেকের সময় বৈধ কাগজপত্র না দেখাতে পারলে আটক করা হচ্ছে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের।

প্যারিসে বসবাসরত মৌলভীবাজারের নাহিয়ান খান বলেন, গত কিছুদিন থেকে ফ্রান্সে যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। মৌলভীবাজারের একজনকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈধতা না থাকা অনেকে ফ্রান্স ত্যাগের চিঠি পাচ্ছেন।

ফ্রান্স প্রবাসী আজিজ রহমান বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ, ফ্রান্স আসার পর আমি গত ৩ বছরে এমনটি দেখিনি। গত সপ্তাহে দুবার আমার কাগজপত্র চেক করা হয়েছে। আমার কাগজপত্র বৈধ হওয়ায় যাচাই করে দুঃখিত বলে ছেড়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, কিন্তু যাদের কাগজ নেই বা অবৈধভাবে আছেন তাদের ধরে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা আছে। পরে ট্রাভেল ডকুমেন্ট তৈরি করে ফেরত পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমার পরিচিত তিন জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ, গত বৃহস্পতিবার একজন বাংলাদেশি আত্মীয়কে দেশে পাঠানো হয়েছে। ফেরত পাঠানো ওই বাংলাদেশিকে ৩৫ দিন ডিপোর্টেশন সেন্টারে রাখা হয়। এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস তার ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিলে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

আজিজ রহমান অভিযোগ করে বলেছেন, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার দূতাবাস এখানে ধরপাকড়ের শিকার হওয়া নিজেদের নাগরিকদের যতটুকু সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ হাইকমিশন তা করছে না।

প্যারিস বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এনায়েত হোসেন সোহেল বলেন, দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যতটুকু সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে আসলে ততটুকু নয়। মূলত অলিম্পিককে সামনে রেখে এবং ফ্রান্সে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে পুলিশি তল্লাশি জোরদার করেছে। এতে করে বৈধ কাগজ না থাকা অভিবাসীরা এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। আবার পর্তুগালসহ দুটি দেশের কার্ড থাকা, অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকা অভিবাসীরাও জটিলতায় পড়ছেন। কেউ কেউ আবার আইনজীবীর মাধ্যমে বের হয়ে আসছেন।

ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ বিন কাশেমের সঙ্গে শুক্রবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এখন পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশিকে ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা বা দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এ বিষয়ে কোনও তথ্য তার জানা নেই। তিনি এ ব্যাপারে দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি কে এফ এম শারহাদ শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। শারহাদ শাকিলের সঙ্গে শুক্রবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।