ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে চায় না ইউরোপীয় দেশগুলো

জার্মানি, ব্রিটেন, স্পেনসহ অপর ইউরোপীয় দেশগুলো বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজেদের সেনা পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার পর মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ কথা জানালো দেশগুলো। ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছে, এমন পদক্ষেপ অনিবার্যভাবে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সোমবার ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার জয় ঠেকাতে লড়াই করতে সেনা পাঠানোসহ পশ্চিমা মিত্রদের কোনও কিছু বাদ দেওয়া উচিত। তবে এই পর্যায়ে এই বিষয়ে কোনও ঐকমত্য হয়নি বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় অটুট সমর্থনের কথা তুলে ধরতে প্যারিসে তড়িঘড়ি করে আয়োজিত ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেছিলেন। এমন সময় তিনি এই মন্তব্য করেছেন যখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছে এবং ইউক্রেন গোলাবারুদ ও সেনা সংকটে ভুগছে।

তবে জার্মানি, ব্রিটেন, স্পেন, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিক তৃতীয় বছরে গড়ানো ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করতে সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতির কোনও ইঙ্গিত দেওয়া থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। 

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস মঙ্গলবার বলেছেন, ইউরোপীয় বা ন্যাটো দেশ থেকে ইউক্রেনের মাটিতে কোনও সেনা পাঠানো হবে না। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াসও একইভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, রণক্ষেত্রে সেনা পাঠানো জার্মানির জন্য কোনও বিকল্প নয়।

ম্যাক্রোঁর মন্তব্য স্পষ্ট করতে গিয়ে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফানে সেজর্ন বলেছেন, মাইন অপসারণ, অস্ত্র উৎপাদন কারখানা ও সাইবার প্রতিরক্ষার মতো নির্দিষ্ট কাজে সেনা পাঠানোর বিষয়টি প্রেসিডেন্টের বিবেচনায় রয়েছে। এই কাজের জন্য ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে সামরিক উপস্থিতি প্রয়োজন হবে। 

লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস কিয়েভ সহযোগিতায় মিত্রদের মনোযোগ দিতে ম্যাক্রোঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এমন সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সাহস প্রয়োজন।

জার্মান চ্যান্সেলর বলেছেন, সোমবারের বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতারা ইউরোপ বহির্ভূত দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় করে ইউক্রেনে সামরিক সহযোগিতা সরবরাহকে গতিশীল করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের পর ইউক্রেনকে সহায়তাকারী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। কিন্তু ন্যাটো জোটের সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে এমন উদ্যোগগুলো নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক দেশটি। 

এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলো যদি লড়াইয়ের জন্য ইউক্রেনে সেনা পাঠায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ন্যাটো দেশগুলো থেকে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা আলোচনা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ নতুন উপাদান।

ইউক্রেনে লড়াইয়ের জন্য ন্যাটো সদস্য দেশের সেনা পাঠালে কেমন ঝুঁকি থাকবে, এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পেসকভ বলেছেন, এমনটি হলে আমাদের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই, আমাদের অনিবার্যতা (সরাসরি সংঘাতের) নিয়ে কথা বলতে হবে।

ক্রেমলিন মুখপাত্র বলেছেন, পশ্চিমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত যে, এমন দৃশ্যপট তাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে যায় কি না।

শীতল যুদ্ধের সময়কার দুঃস্বপ্ন রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘাত নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা ও জনগণের মধ্যে আলোচনা বড় ধরনের উত্তেজনার ইঙ্গিত হাজির করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ৩২ বছর পর রাশিয়ার পুনর্জাগরণ মোকাবিলায় পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিপদও হাজির করে।

ন্যাটোর প্রধান শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছিলেন, রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সংঘাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে।

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর পশ্চিমা নেতারা বলেছিলেন, রণক্ষেত্রে রাশিয়াকে পরাজিত করতে ইউক্রেনকে তারা সহযোগিতা করবেন। কিন্তু রাশিয়ার সেই পরাজয় ঘটেনি।

হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন সেনাদের পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা নেই যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া ইউক্রেনে ন্যাটো সেনাদের পাঠানোরও কোনও পরিকল্পনা নেই।