দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই সংঘাত। এর অবসানের উপায়গুলো খুঁজে বের করতে সপ্তাহান্তে একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে এই সম্মেলনে কিয়েভের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রাশিয়াকে। যে কারণে সম্মেলনে অংশ নেবে না চীনও। আর এজন্যেই বিশ্লেষকদের আলোচনায় রয়েছে মস্কো। তাদের অনেকেই মনে করছেন, রাশিয়াকে ছাড়া শান্তি আলোচনায় কোনও সমাধান আসবে না। এই সম্মেলন বিশ্ব নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারলেও রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার কিয়েভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
১৫-১৬ জুন বুর্গেনস্টকের সুইস পাহাড়ের চূড়ায় একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মানি, ইতালি, ব্রিটেন, কানাডা ও জাপানের নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।
সম্মেলনটিতে ভারত একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর মস্কোকে পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ধাক্কার হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে দেশটি। একইভাবে তুরস্ক ও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও বৈঠকে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে দেশ দুটি।
তবে ইউক্রেনের কয়েক মাসের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে সুসসম্পর্ক থাকা বেশ কিছু দেশ অংশ নিচ্ছে না। বিশেষ করে এই সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার কথা সাফ জানিয়েছে দিয়েছে চীন। রাশিয়াকে আমন্ত্রণ না জানানোয় এই সম্মেলনকে অর্থহীন বলেও মন্তব্য করেছিল দেশটি। রুশ তেলের একটি প্রধান ভোক্তা ও পণ্য সরবরাহকারী বেইজিং।
মঙ্গলবার বার্লিনে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘বৈঠকটি ইতোমধ্যে একটি সুফল বয়ে এনেছে।’ তখন যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেন তিনি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধটি যেহেতু এখন আর প্রথম মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই সেহেতু অংশীদার এবং অংশীদার নয় এমন দেশগুলোকে এক টেবিলে আনা ইউক্রেনের জন্য একটি কঠিন মিশন’
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার সৌদি আরব সফর করেছিলেন জেলেনস্কি। তবে সম্মেলনে দেশটি কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে কিনা এখনও তা স্পষ্ট নয়।
সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও পূর্ব ইউরোপ বিশেষজ্ঞ উলরিচ স্মিড। আন্তর্জাতিক মহলে কিছু অংশের সমর্থন ও চীনের অনুপস্থিতির কারণে শীর্ষ এই সম্মেলনকে ‘একটি মিশ্র ব্যাগ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। স্মিড বলেন, ‘তাহলে প্রশ্ন তো জাগেই: শান্তি কি আসলেই সম্ভব?’
তিনি মনে করেন, ‘যতদিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন….ততদিন তা কঠিন হবে।’