প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো ও ইউক্রেনকে সমর্থনের অঙ্গীকার ইইউ নেতাদের

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনায় ঐকমত্য পোষণ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগত পরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কমে যাওয়ায় ইউরোপ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সম্মেলনের সভাপতি আন্তোনিও কোস্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। আমরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছি এবং ইউক্রেনের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছি।’ তিনি জানান, ইইউ নেতারা প্রতিরক্ষা খাতে ১৫০ বিলিয়ন ইউরো (১৬০ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এই অর্থ ইইউ সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করা হবে।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘ইউরোপকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে হবে। আমরা রাশিয়ার চেয়ে শক্তিশালী।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ইউক্রেনে যা–ই ঘটুক না কেন, ইউরোপকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

ইউক্রেনকে সমর্থন
ইইউ নেতারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। তবে হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী নেতা ভিক্টর অরবান এই ঘোষণায় সমর্থন দেননি। তিনি ট্রাম্পের মিত্র এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছেন। ইইউ নেতারা তাদের ঘোষণায় বলেছেন, ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন সংকট নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না। তারা ইউক্রেনকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও অঙ্গীকার করেছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ইইউ নেতারা। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত আলোচনার পর এই অভ্যর্থনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া ইউরোপের পক্ষে ইউক্রেনকে সমর্থন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত বছর ইউক্রেনকে প্রদত্ত সামরিক সহযোগিতার ৪০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ‘আমাদের শান্ত ও বিচক্ষণ মস্তিষ্কে কাজ করতে হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আগামী মাস ও বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য তাদের সমর্থন অপরিহার্য।’

ম্যাক্রোঁ জানান, নেতারা জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আকাশ ও সমুদ্রপথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ধারণাকে সমর্থন করেছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের ইচ্ছা পরীক্ষার একটি সুযোগ।

ফ্রান্সের পারমাণবিক প্রতিরক্ষা প্রস্তাব
বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফ্রান্সের পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষা ইউরোপের অন্যান্য দেশের জন্য উন্মুক্ত করা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা। তিনি বলেছেন, ‘এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।’ তবে চেক প্রজাতন্ত্রের মতো কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে।

ইউরোপে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ
ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলো যদি নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে না পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়াবে না।

জার্মানিতে আগামী সরকার গঠনে আগ্রহী দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে নরওয়ে ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করার পাশাপাশি নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।