রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের ওপর বিমান হামলার অভিযোগ করেছে। এ হামলায় বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় হামলা সাময়িক বিরতি দেবেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়। এ সময় পুতিন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হননি। তবে তিনি ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে হামলায় সাময়িক বিরতির প্রস্তাব দেন, যা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মেনে নেন।
বুধবার ভোররাতে রাশিয়ার বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর জেলেনস্কি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, মস্কো যেন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে না পারে, সে জন্য সব প্রচেষ্টা চালানো হোক। জেলেনস্কির প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রেই ইয়ারমাক টেলিগ্রামে বলেন, ‘রাশিয়া এখনই বেসামরিক অবকাঠামো ও মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।’
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ স্থাপনায় হামলা সাময়িক বিরতির পুতিনের ঘোষণা কোনও কাজের কথা নয়। ট্রাম্পকে আরও বেশি ছাড় আদায় করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জার্মান টেলিভিশন জেডডিএফ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিস্টোরিয়াস বলেন, ‘এই কথিত ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপের পর প্রথম রাতেই বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা কমেনি। পুতিন এখানে একটি খেলা খেলছেন এবং আমি নিশ্চিত, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আর বেশি সময় ধরে বসে থাকতে পারবেন না।’
সংঘাতে লিপ্ত উভয় পক্ষই রাতভর ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে। ইউক্রেনের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চল ও রাজধানী কিয়েভের আশেপাশের এলাকায় বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের রেলওয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় হামলা চালানো হয়েছে। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছে, দক্ষিণ রাশিয়ার একটি তেল টার্মিনালে হামলা চালানো হয়েছে, যাতে আগুন লেগেছে।
সুমি অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাশিয়ার ড্রোন হামলায় দুটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কেউ আহত না হলেও রোগী ও হাসপাতাল কর্মীদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। কিয়েভ অঞ্চলে একজন ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি আহত হয়েছেন। রাজধানীর কাছে বুচা জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুলিশ বলেছে, বিমান হামলায় ১৮টি বেসরকারি বাড়ি, ২০টি ফ্ল্যাট, ১৯টি গাড়ি, দুটি দোকান ও একটি ক্যাফে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেন আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার ফোনালাপের সময় ফ্রন্টলাইনের কাছে স্লোভিয়ানস্ক শহরে রাশিয়ার হামলা চালানো হয়েছে। এতে শহরের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপের পরের কয়েক ঘণ্টায় রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, রাশিয়া ১৪৫টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৭২টি ড্রোন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে এবং ৫৬টি ড্রোন নষ্ট হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী টেলিগ্রামে জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার হামলা সুমি, ওডেসা, পোলতাভা, দ্নিপ্রোপেট্রোভস্ক, কিয়েভ ও চেরনিহিভ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে।’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাতভর তারা ৫৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ৩৫টি সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে ধ্বংস করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় শুধু ধ্বংস হওয়া ড্রোনের সংখ্যা জানিয়েছে, ইউক্রেন কতটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, তা উল্লেখ করেনি।
দক্ষিণ রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ বুধবার ভোররাতে জানিয়েছে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় কাভকাজস্কায়া গ্রামের কাছে একটি তেল ডিপোতে ছোটখাটো আগুন লেগেছে। এতে কেউ আহত হননি, তবে ২০ বর্গমিটার (২১৫ বর্গফুট) এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ৩০ জন কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে দক্ষিণ রাশিয়ার প্রশাসন টেলিগ্রামে জানিয়েছে।
রাশিয়ার শট নিউজ টেলিগ্রাম চ্যানেল রাতের বেলা একটি শিল্পাঞ্চলে আগুনের ভিডিও পোস্ট করেছে। এটিকে রেল ও পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল রফতানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে শট নিউজের এই প্রতিবেদন যাচাই করতে পারেনি।
রাশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ রোসাভিয়াটসিয়া বলেছে, রাতভর কয়েক ঘণ্টার জন্য মস্কোর পূর্বে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে কাজান, নিঝনি নভগোরদ ও নিঝনেকামস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ‘বিমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।