রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

লন্ডনে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় থাকছেন না মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে লন্ডনে হওয়া আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সরে দাঁড়িয়েছেন। বুধবারের এই বৈঠকে এখন শুধু যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। অন্যদিকে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

উইটকফ ও রুবিওর পরিবর্তে এই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেন বিষয়ক দূত জেনারেল কেইথ কেলগ। রুবিও এই আলোচনাকে কারিগরি বৈঠক বলে উল্লেখ করেছেন। এর পরিবর্তে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সপ্তাহে মস্কোতে আলোচনায় মনোযোগ দেবেন, যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে।

গত কয়েকদিন ধরে অনুমান করা হচ্ছিল যে, রাশিয়া বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হতে পারে—যদি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এটিকে ‘ফেক নিউজ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মানার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউক্রেন আইনগতভাবে ক্রিমিয়ার দখলকে স্বীকৃতি দেয় না। এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। 

যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে লন্ডন বৈঠক থেকে সরে দাঁড়ালে ব্রিটিশ কূটনীতিকরা কিছুটা হতবাক হয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ‘লজিস্টিক সমস্যা’কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও, সিদ্ধান্তটি শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামির সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন আলোচনা ‘গঠনমূলক ও কার্যকর’ হবে। তবে, তিনি আগামী মাসে যুক্তরাজ্য সফর পুনরায় নির্ধারণ করবেন বলে জানান। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইস্টারের ছুটিতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, রাশিয়া আসলে কোনও হামলা কমায়নি। তিনি বলেন, পুতিন যুদ্ধবিরতি বলেছেন, কিন্তু তা ভঙ্গ করেছেন। তিনি শান্তি চান বলে দাবি করেন, কিন্তু পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হননি। 

এদিকে, ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা ইউরিয় সাক বিবিসিকে বলেছেন, ক্রিমিয়ার মতো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা অপ্রাসঙ্গিক। তবে, লন্ডন বৈঠকে ইউক্রেনের আলোচকরা একটি স্পষ্ট এজেন্ডা নিয়ে অংশ নেবেন, যা যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করবে। 

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের পর থেকে এ যুদ্ধে লাখো মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় বিশ্বজুড়ে শরণার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই এই সংঘাতের সূত্রপাত, যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়।