ন্যাটো সম্মেলনে জেলেনস্কির উপস্থিতি নিয়ে জটিলতা

চলতি মাসে হেগ-এ অনুষ্ঠেয় ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপস্থিতি ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সম্মেলন আয়োজকরা চেষ্টা করছেন এমন একটি ব্যবস্থা করতে, যাতে জেলেনস্কি উপস্থিত থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষুব্ধ না হন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে  ন্যাটো সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলন সংক্ষিপ্ত হবে, ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা সীমিত থাকবে  এবং জেলেনস্কিকে মূল সভা থেকে দূরে রেখে প্রাক-সম্মেলন নৈশভোজে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কি-ট্রাম্প দ্বন্দ্বে ইউক্রেনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক জোট প্রায় ভেঙে পড়ে। এ কারণেই এবার ইউক্রেন ইস্যুতে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে ন্যাটো।

রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে জেলেনস্কি নিয়মিত ন্যাটো সম্মেলনে অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এসেছেন। এসব সম্মেলনে ইউক্রেনকে বিপুল অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং রাশিয়ার যুদ্ধকে অবৈধ বলে নিন্দা জানানো হয়।

তবে ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন অবস্থান পাল্টেছে। এখন তারা রাশিয়ার যুদ্ধকে আংশিক যৌক্তিক বলে উল্লেখ করে এবং ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়েও নীরব। ট্রাম্প তো ইউক্রেনকে সরাসরি সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তাও বন্ধ রেখেছেন কিছুদিনের জন্য।

ন্যাটোর একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, জেলেনস্কি যদি একেবারেই না আসেন, তা হলে অন্তত জনসংযোগের দিক থেকে এটি হবে এক বিপর্যয়।

এই সম্মেলনে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে। ন্যাটো দেশগুলো সামরিক খাতে ব্যয় ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩.৫ শতাংশ করতে রাজি হচ্ছে। সাইবার প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতে আরও ১.৫ শতাংশ ব্যয়ের ঘোষণা এলে তা ট্রাম্পের দাবি করা ৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাবে।

এই ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি পেলে ট্রাম্প কূটনৈতিকভাবে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই সম্মেলনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত ভাষা বা ইউক্রেন প্রসঙ্গ যতটা সম্ভব সীমিত রাখা হবে।

হেগ সম্মেলনে এবার ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল-এর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হচ্ছে না। এর বদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে একটি ‘ওয়ার্কিং ডিনার’ হতে পারে, যেখানে ইউক্রেনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।

ডাচ রাজা উইলেম-আলেকজান্ডারের আয়োজনে প্রাক-সম্মেলন নৈশভোজে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে বলেও জানা গেছে।

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, ইউক্রেনকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে জেলেনস্কি অংশগ্রহণ করবেন কি না—সে বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু বলেননি।

সোমবার রুটের সঙ্গে বৈঠকের পর জেলেনস্কি এক্স-এ লিখেছেন,  ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাশিয়ার কাছে সঠিক বার্তা পাঠাবে।

ইউরোপীয় নেতারা প্রকাশ্যে জেলেনস্কির আমন্ত্রণের পক্ষেই মত দিচ্ছেন। এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্নো পেভকুর বলেন, আমি চাই ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকুন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াসও আমন্ত্রণকে স্বাগত জানান।

তবে ন্যাটোর কূটনীতিকরা জেলেনস্কির আনুষ্ঠানিক ভূমিকাকে গুরুত্ব না দিয়ে বলছেন, অনেক সদস্যই চান তিনি থাকুন। কিন্তু কীভাবে থাকবেন, তা নিয়ে নমনীয়তা রয়েছে।

একজন সিনিয়র ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, আমরা যেন ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল না হলে চলবে না—এই ফাঁদে না পড়ি। তিনি যদি অন্তত নেতাদের ডিনারে অংশ নেন, সেটিই ন্যূনতম বার্তা হয়ে যাবে।