ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৬, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়

রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ছয়জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে যুদ্ধবন্দি বিনিময় নিয়ে কিয়েভ ও মস্কোর মাঝে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী শনিবার জানায়, রাতভর রাশিয়া ২১৫টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে ৮৭টি ড্রোন ও সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ। শহরটির মেয়র ইগোর তেরেখভ বলেন, ২০২২ সালে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এটি ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। প্রথম দফার হামলায় তিনজন নিহত হন। পরে শনিবার বিকালে রাশিয়া শহরের কেন্দ্রে আবার বোমা বর্ষণ করে, যাতে আরও একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, দুটি হামলায় মোট ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ও এক নবজাতকও রয়েছে। মেয়র তেরেখভ বলেন, ভোরে চালানো হামলায় ৪৮টি ইরানীয় ড্রোন, দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র ও চারটি গাইডেড বোমা ব্যবহার করে রাশিয়া। খারকিভ শহরটি রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলিনা বেলোস অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, একটি জ্বলন্ত ভবনে আটকে পড়া এক শিশুকে বাঁচাতে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে দমকলকর্মীরা এসে উদ্ধার তৎপরতা চালান।

বৃহস্পতিবারও খারকিভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৮ জন আহত হন, যাদের মধ্যে চারজন শিশু।

দক্ষিণাঞ্চলের খেরসন শহরে রুশ গোলাবর্ষণে এক দম্পতি নিহত ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর ওলেক্সান্দার প্রোকুদিন। দিনিপ্রো শহরে পৃথক হামলায় ৪৫ ও ৮৮ বছর বয়সী দুই নারী আহত হন।

শুক্রবার রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলায় আরও ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। শনিবার লুতস্ক শহরে উদ্ধারকর্মীরা আরেকটি মরদেহ খুঁজে পাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে।

মস্কো বলেছে, ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ জবাবে এসব হামলা চালানো হয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল সামরিক স্থাপনা।

ইউক্রেন গত সপ্তাহে রাশিয়ার গভীরে ড্রোন হামলা চালিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই আঘাতকে রাশিয়া উসকানি হিসেবে দেখছে। জানা গেছে, ইউক্রেন ১৮ মাস ধরে এই অভিযান পরিকল্পনা করেছিল।

রাশিয়া বলেছে, ওই ড্রোন হামলার সময় তাদের বোমারু বিমানগুলো ইউক্রেনের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

অন্যদিকে, ইউক্রেন ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে এবং তা নিয়ে সোমবার ইস্তাম্বুলে আলোচনা হয়েছে। তবে মস্কো তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এই যুদ্ধ রাশিয়ার অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমাদের জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে এটি জড়িত।

পুতিন ইউক্রেনকে চারটি আংশিক দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার, ন্যাটো সদস্যপদ প্রত্যাশা ত্যাগ এবং পশ্চিমা সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। কিয়েভ এই শর্তগুলোকে অসম্ভব বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এর বদলে পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার পরে, ইউক্রেন রাশিয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। মস্কো দাবি করেছিল, কিয়েভ একটি নির্ধারিত যুদ্ধবন্দি বিনিময় ও মৃত সেনাদের মরদেহ ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করেছে।

ক্রেমলিন উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, ইস্তাম্বুলে হওয়া চুক্তির পরও ইউক্রেন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। তবে ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দি সংক্রান্ত সমন্বয় সদর দফতর টেলিগ্রামে জানায়, রাশিয়ার বক্তব্য সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণীত।