তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত ইউরোপ

স্কুল বন্ধ ফ্রান্সে, ইতালিতে নিষিদ্ধ বাইরের কাজ

তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে বিপর্যস্ত ইউরোপ। স্পেন রেকর্ড গরমের জুন মাস পার করেছে। ফ্রান্সে এক দিনে এক হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে। আর ইতালির কয়েকটি অঞ্চলে দিনের গরম সময়ে শ্রমিকদের বাইরের সব ধরনের কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক নয়। এমনকি গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে যে তাপমাত্রা থাকে, তার চেয়েও অনেক বেশি। ইউরোপ মহাদেশ বিশ্বে দ্রুততম হারে উষ্ণ হচ্ছে, যা বিশ্বের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির হারের চেয়ে দ্বিগুণ।

বার্সেলোনায় এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মৃত্যু এবং ইতালির বোলোনিয়ার কাছে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুকে তাপপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করে দেখছে কর্তৃপক্ষ। ইতালির সিসিলিতে হৃদরোগে আক্রান্ত এক ৫৩ বছর বয়সী নারী গরমের মধ্যে হাঁটার সময় মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।

ফ্রান্সের আবহাওয়া সংস্থা মেতেও ফ্রান্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশটির কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। ১৬টি বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার ১ হাজার  ৩৫০টি স্কুল সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ২০০টির মতো।

এছাড়া আইফেল টাওয়ারের শীর্ষতল মঙ্গলবার ও বুধবারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটকদের প্রচুর পানি পান এবং বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইতালিতে মিলান ও রোমসহ ১৭টি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। গরমে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে বাইরে নির্মাণ বা কৃষিকাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফ্রান্সের কৃষকরা ফসল কাটার কাজ রাতের বেলায় করছেন। যাতে করে দিনের প্রচণ্ড গরম এড়িয়ে চলা যায়।

স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা জানায়, দেশটির বালিয়ারিক সাগরে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রি বেশি। এই উচ্চ তাপমাত্রা স্থলভাগের গরমকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া দফতর বলেছে, জুন মাস ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে গরম। গড় তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লেয়ার নালিস বলেন, জুলাইয়ের শুরুতে এমন চরম তাপপ্রবাহ অস্বাভাবিক হলেও এমনটি প্রথমবার ঘটছে না। গ্রীষ্মের শেষ দিকে এমন ঘটনা দেখা যেত আগে, এখন তা আগেই শুরু হচ্ছে।

লন্ডনের বাসিন্দা ওমর বাহ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শুনতাম। এখন সেটা টের পাচ্ছি। ছোটবেলায় গ্রীষ্ম এমন ছিল না।

স্পেনের মালাগায় রেড ক্রস গরমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে স্থাপন করেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়কেন্দ্র ক্লাইমেট রিফিউজ।

ফিনল্যান্ড থেকে প্যারিসে ঘুরতে আসা ৪৫ বছর বয়সী সুসানা লেইভোনেন বলেন, আমরা ভোরেই ঘুম থেকে উঠি যাতে দুপুরের আগেই বের হতে পারি। দুপুরে বিশ্রাম নিই বা দোকানে গিয়ে কিছুটা ঠান্ডা পরিবেশ পাই।

সুইস রি-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে বছরে তাপপ্রবাহে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই সংখ্যা বন্যা, ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্মিলিত মৃত্যুর চেয়েও বেশি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বন ধ্বংস ও শিল্পপ্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ। গত বছর ছিল রেকর্ড গরমের বছর।