বাংলাদেশে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের সন্দেহে আসামে যুবক গ্রেফতার

গ্রেফতারকৃত যুবক আলমগীর হুসাইনবাংলাদেশে জেএমবি’র মতো সন্ত্রাসী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ভারতের পুলিশ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি পাসপোর্টসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন আসামের দক্ষিণাঞ্চলের করিমগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আলমগীর হুসাইন।

৩৮ বছরের আলমগীর হুসাইনের অর্জিত সম্পদ নিয়ে ভারতের কর্তৃপক্ষের সন্দেহ রয়েছে। কারণ, তার আয়ের উৎসের সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর মতো সন্ত্রাসী দলগুলো তাকে অর্থায়ন করে থাকতে পারে।

১৯৯৮ সালে আদি নিবাস আসামের বদরপুর শহর ত্যাগ করেন আলমগীর হুসেইন। ১০ বছর পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভারতের নিজ শহরে ফেরেন তিনি। স্থানীয় এক নারীকে বিয়ের কিছুদিন পরই তাকে ত্যাগ করেন আলমগীর। ২০১৩ সালে ফের বদরপুরে স্থায়ী হন তিনি।

স্থানীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আলমগীর হুসেইন-এর ব্যাপারে পুলিশকে সন্দিহান করে তোলে। এদিকে, গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় একটি বাড়িসহ বেশ কিছু সম্পদ কেনেন আলমগীর। এগুলোর মূল্য চার কোটি রুপিরও বেশি। এ ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরও জোরালো হয়।

করিমগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, ‘তিনি প্রায় ২০ বছর আগে বাংলাদেশে তার পদস্খলনের কথা স্বীকার করেছেন। সিঙ্গাপুর যেতে তার একটি বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রয়োজন ছিল। এই কম সময়ের মধ্যে তিনি কিভাবে এতো অর্থের মালিক হয়েছেন সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশটিতে প্রবেশ করেন আলমগীর। পুলিশ এ ঘটনা জানতে পারার পরই রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রদীপ রঞ্জন বলেন, আমরা বাংলাদেশি হাই কমিশনকে এসব তথ্য জানিয়ে সেই দেশে তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।

উল্লেখ্য, জেএমবির বাংলাদেশি ও ভারতে সহযোগী সন্দেহে যাদেরকে করিমগঞ্জ জেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তা গত ৫ বছরের মধ্যেই হয়েছে।

ভারতীয় পুলিশের আশঙ্কা, হোসাইন বাংলাদেশি পাসপোর্ট অবৈধভাবে সংগ্রহ করে থাকতে পারে। ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরা এমনটাই করে থাকে।

তবে অনেক বাংলাদেশি পশ্চিমা ও মধ্য এশিয়ার দেশে পাড়ি দিতে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন বলেও মনে করা হয়।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে করিমগঞ্জ জেলা থেকে পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। যাদের মধ্যে ৪জন বাংলাদেশের সিলেটের বাসিন্দা এবং ৯ জন স্থানীয় রয়েছেন। স্থানীয়দের মধ্যে একজন কংগ্রেস নেতা মনোয়ারা বেগম। গ্রেফতারকৃত অবৈধ পাসপোর্ট চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এ অবৈধ পাসপোর্ট চক্র করিমগঞ্জের পাশাপাশি নাগাঁও, হাইলাকান্দি ও শিলচরে বিস্তৃত। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাও ২ লাখ রুপির বিনিময়ে ভেরিফিকেশন সনদ দিচ্ছেন।

চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি উড়িষ্যাতে দুই বাংলাদেশিকে ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আরও দুই ব্যক্তি পালিয়ে যান।

অনেক বাংলাদেশি অপরাধীও গা ঢাকা দিতে ভুয়া পরিচয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনটি খুনের মামলার আসামি কুমিল্লা জেলার বাসিন্দাকে চলতি বছর আসামের কাছাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত সোহেল আহমেদ ওরফে ওমর নাসির ওরফে সাজু কাছাড়ে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে আত্মগোপন করেছিল।

আসাম পুলিশ প্রথমে ধারণা করেছিল, ঢাকার গুলশান হামলায় জড়িত জেএমবি সদস্যদের একজন হতে পারে সোহেল। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে তিনটি খুনের মামলার আসামি হওয়ায় সোহেল পালিয়ে ভারত আসে।

এর আগে ২০১৩ সালের মে কাছাড় জেলা পুলিশ মুইবুল হক নামের ৩৯ বছরের এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। মুইবুল লন্ডনে দুটি হত্যা মামলার আসামি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ হাই কমিশনের কাছ থেকে সতর্ক বার্তা পেয়ে পুলিশ তাকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

/এমপি/এএ/