মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার উদ্যোগ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিয়ানমার সফরের পর উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ভারত ইয়াঙ্গুনে ইন্দো-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স (আইএমসিসি) গড়ে তুলেছে। এই সংস্থাটি মূলত ভারতীয় বড় বড় কোম্পানিগুলোর হয়ে মিয়ানমারে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেবে। সংস্থাটির লক্ষ্য, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে উভয় দেশের বাণিজ্য ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা। নবগঠিত আইএমসিসির সভাপতি মিয়ানমার টাইমস-কে এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধির এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।

ipm-with-dassk_0

ইন্দো-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সুনিল সেথ বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় নিলে ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্য চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এমনকি সিঙ্গাপুরের চেয়েও কম। আমরা ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্য সমতায় পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করতে চাই। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য বাণিজ্য দ্বিগুণ করা। উভয় দেশের মধ্যে বর্তমানে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার।  আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে উভয় দেশের বাণিজ্য ৪০০-৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চাই আমরা।‘

সুনিল আরও বলেন, ‘উভয় দেশ শ্রম ও সম্পদশালী। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি ভারতের বড় একটি উদ্বেগের কারণ। এ কারণেই আইএমসিসি গড়ে তোলা হয়েছে। যা ভারতের বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করবে। মিয়ানমারের ছোট ও মাঝারি কোম্পানি ও উদ্যোক্তাদেরও প্রতিনিধিত্ব করবে আইএমসিসি।’

ভারতের টাটা ইন্টারন্যাশনাল, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ও এসকোর্টস গ্রুপের মতো কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবে আইএমসিসি। সুনি সেথ মিয়ানমারে টাটা কোম্পানির প্রধান হিসেবে কর্মরত আছে।

সুনিল বলেন, নতুন বিনিয়োগ ও কোম্পানি আইন পাস হওয়ার পর এখনই মিয়ানমারের বাণিজ্য বৃদ্ধির সময়। আমরা দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। রাখাইনের পরিস্থিতি যদি দীর্ঘমেয়াদে অব্যাহত থাকে তাহলে তা দেশটির (মিয়ানমার) ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু আমরা আশাবাদী যে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।

মিয়ানমার প্রধানত ভারতে শস্য ও মাছ রফতানি করে। সুনিল জানান, বার্ষিক উৎপাদিত ১২ লাখ টন ডাল ও শিমের মধ্যে ৮০ শতাংশই ভারতে রফতানি হয়। বিপরীতে ভারত থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টিল ও মেশিনারি পণ্য আমদানি মিয়ানমার। ভারত দেশটির কৃষিখাতে পণ্য ও সেবা বৃদ্ধিতে আগ্রহী।

সুনিল বলেন, ‘কৃষিতে ভারতের বড় ধরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। মিয়ানমারের বীজ ও শস্যের মান বাড়াতে আমরা সহযোগিতা করতে পারি। এতে করে দেশটি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে শস্য রফতানি করতে পারবে।’

মিয়ানমারের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতার উদ্যোগও বৃদ্ধি করবে ভারত। সুনিলের মতে, ‘ভারত গত কয়েক বছরে সৌরশক্তি উৎপাদনে অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা জানি যে, মিয়নামার নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রতি ঝুঁকছে। এই ক্ষেত্রে ভারত নিশ্চিতভাবেই সহযোগিতা করতে পারে। এছাড়া মিয়ানমারের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের অবকাঠামো নির্মাণেও সহযোগিতা করতে পারবে ভারত।’

ভারতীয় এই ব্যবসায়ী জানান, মিয়ানমারের অবকাঠামো খাতেও ভারত নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারকে একটি ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে নির্মাণে সরকারি ঋণ দিয়েছে ভারত। এই হাইওয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভারতকে সংযুক্ত করবে। হাইওয়েটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে ভারতীয় একটি কোম্পানি। এছাড়া সিতওয়ে বন্দর ও পালেতওয়া অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করছে ভারতীয় কোম্পানি।

মিয়ানমারের তথ্য-প্রযুক্তি ও নার্সিং খাতের দক্ষতা ঘাটতি পূরণেও ভারত উদ্যোগ নিচ্ছে। সুনিল বলেন, এই দুটি খাতে ভারতের দক্ষতা অনেক ভালো। ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা এসব ক্ষেত্রে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারব।