পলাতক সালেহিনের নেতৃত্বে জেএমবি’র ভারতীয় শাখা!

ভারতে নতুন শাখা খুলেছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির পলাতক দুই নেতা সালাউদ্দিন সালেহিন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানের নেতৃত্বে এই শাখা চালু হয়েছে। ভারতে সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া বা জেএমআই। সংগঠনটির মিডিয়া শাখা বলে পরিচিত শাম আল হিন্দ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সালাউদ্দিন সালেহিন নিজেকে সংগঠনের ভারতীয় শাখার আমির বা প্রধান হিসেবে দাবি করেছে। আর ভারতে কাওছার নামে পরিচিত বোমারু মিজান সালেহিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই দুই জঙ্গি নেতাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তথ্য দিতে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

পলাতক শীর্ষ জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহিন

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে দিন-দুপুরে পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালায় জেএমবির সদস্যরা। গুলি ও বোমা ফাটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি সালাউদ্দিন ওরফে সালেহিন ওরফে সজিব, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান এবং রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদকে ছিনিয়ে নেয় তারা। ওইদিন কাশিমপুর কারাগার থেকে এসব জঙ্গিকে একটি মামলায় হাজির করার জন্য ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়া হচ্ছিল।

জঙ্গিদের এ হামলায় পুলিশ কনস্টেবল আতিকুল ইসলাম আতিক নিহত হন। আহত হন পুলিশের অপর দুই সদস্য হাবিবুর রহমান ও সোহেল রানা। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রাকিব হাসান। কিন্তু ভয়ঙ্কর জঙ্গি সালেহিন ও বোমারু মিজান অদ্যাবধি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছিল তারা ভারতে লুকিয়ে রয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তারা দুজন পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে থাকা জেএমবির সদস্যদের সঙ্গে সংগঠিত করে। তারা বাংলা, আসাম ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে জেএমবির ভিত্তি স্থাপন শুরু করে। তাদেরকে গ্রেফতারে নির্ভরযোগ্য তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকার পৃথকভাবে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) উভয়ের জন্য পৃথকভাবে ৫ লাখ রুপি এবং বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) উভয়ের জন্য আলাদাভাবে ৫ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

শাম আল হিন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালেহিন বলেছে, ‘আমরা হিন্দুস্তানকে হিজরত ও জিহাদের এমন কেন্দ্র হিসেবে নিশ্চিত করতে কাজ করছি যাতে ভারতের জনগণ পরবর্তী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।’

সালেহিন আরও বলে, ‘আমার এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার কারণ আমরা এখন বিস্তৃত পরিসরে নতুন সংগঠন চালু করতে সক্ষম। আমরা বাংলাদেশ থেকে শুরু করে এখন ছড়িয়ে পড়েছি। জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া তারই উদাহরণ। এখানেও কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’  সাক্ষাৎকারে ভারত দখল অভিযানের কথাও জানায় সালেহিন।

২০০১ সালে জেএমবি প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এর জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে সালেহিন। এর আগে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সমালোচনা করে সে দাবি করে, তারা আল কায়েদাকে অনুসরণ করে।  

সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালানো জেএমবির আরেক শাখারও সমালোচনা করে সালেহিন। ওই শাখাটি নব্য জেএমবি হিসেবে পরিচিত। তারা আইএসের সহযোগী হিসেবে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। ওই হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়। পরে আইন ‍শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।

ভারতের কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্সের প্রধান ডেপুটি কমিশনার মুরালিধর শর্মা জানান, তিনি সালেহিনের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে জানেন না। কিন্তু কলকাতা পুলিশ ১৯ জানুয়ারি বোধ গয়া বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত জেএমবির ৫ সদস্যকে আটক করে। তারাই সালেহিন ও মিজান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে।

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) এক তদন্তে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে বোমা হামলার ঘটনায়ও এই দুজনের নাম পাওয়া গেছে। ওই হামলার মাধ্যমে মূলত ভারতে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সুন্নি, হাফিজুর রহমান শেখ ও মাহিন নামেও পরিচিত জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন সালেহিন। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায়। আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের আগ পর্যন্ত সে বীরভূমের কিরনাহারের নিমরা গ্রামে বাস করত। মিজান জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানের নিজ গ্রাম জামালপুরের খলিফাপাড়ার বাসিন্দা। সে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সালে ধরার পড়ার আগ পর্যন্ত জেএমবির বিস্ফোরক শাখার প্রধান ছিল।