কূটনীতিকদের হয়রানির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ভারত ও পাকিস্তানের

পাকিস্তান জানিয়েছে, তাদের কূটনীতিকরা ভারতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অপরিচিত লোকজন তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। পাকিস্তান ভারতে নিযুক্ত তাদের কূটনীতিকদের হয়রানির শিকার হওয়ার এই অভিযোগ সামনে আনলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানে নিয়োজিত ভারতের কূটনীতিকরাও একই রকম হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন অনেকদিন ধরে। পাকিস্তানের দাবি, ভারত হয়রানি থেকে শিশুদেরকেও রেহাই দিচ্ছে না। আর ভারতের দাবি, পাকিস্তান কূটনীতিকদের ল্যাপটপ পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।

i

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে অভিযুক্ত করে দাবি করেছে, পাকিস্তানী কূটনীতকদের ভারতীয় সরকারি সংস্থা ‘ব্যাপক হয়রানি করছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং সোজাসুজি সন্ত্রাসের ভুক্তভোগী বানাচ্ছে।’ পাকিস্তানের এই দাবির প্রতিক্রিয়ায় ভারত বলেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে। অন্যদিকে পাকিস্তানে থাকা ভারতীয় কূটনীতিকরা বলেছেন, তাদের সঙ্গেও কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানে একই ধরণের আচরণ করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের কূটনীতিকদের প্রতি হওয়া হয়রানির বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, অন্তত তিনজন কূটনীতিক এবং কূটনীতিকদের সন্তানরা হেনস্তার শিকার হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি, হয়রানি করার বিষয়টি কোনও একটি ঘটনাতে সীমাবদ্ধ নয়; একাধিকবার তা হয়েছে। বিশেষ করে কর্মকর্তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে। দুইবার স্কুল থেকে ফেরার পথে কূটনীতিকদের সন্তান বহনকারী গাড়ি থামিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতকারীরা তাদের হুমকি দিয়েছে। এমনকি তাদের ভিডিও করেছে এবং শিশুদের ছবিও তুলে নিয়ে গেছে। মার্চের ৭ ও ৮ তারিখে একই ঘটনা ঘটেছে।

আবার মার্চের ৯ তারিখ পাকিস্তান দূতাবাসের নৌ-উপদেষ্টার গাড়িকে তাড়া করেছিল অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন। এছাড়া পাকিস্তান র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে গাড়ি থেকে জোর করে বের করে নিয়ে শাসানো হয়েছে। পাকিস্তানের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানী কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ভারত সরকারের। কিন্তু যে ঘৃণ্য ঘটনা থেকে শিশুদেরকেও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না তা থামাতে হয় ভারত সরকার অক্ষম অথবা অনিচ্ছুক।’

 

ভারতেরও অভিযোগ আছে

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইসলামাবাদে নিয়োজিত ভারতীয় কূটনীতিকদের জন্য হুমকি ও হয়রানির শিকার হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। গত এক বছর ধরে বরং আমরা হয়রানির ঘটনা বাড়তে দেখছি।’ তিনি আরও দাবি করেছেন, গত বছর পাকিস্তানের আইএসআইয়ের লোকজন ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তার বাসস্থানে ঢুকে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ব্যাপক নজরদারি, ব্যক্তিগত বিষয়ে অনুপ্রবেশ এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের খুব কাছ থেকে অনুসরণ করার মতো ঘটনা বহু বছর ধরে চলছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মুখের ওপর ক্যামেরা ধরে ভিডিও করে, ফোনে বাজে কথা বলে, মোবাইলে অশ্লীল বার্তা পাঠায়।’ একবার পাকিস্তানে কর্মরত ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার বাসায় ঢুকে আইএসআই তার ল্যাপটপও চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল, দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পাকিস্তান ভিয়েনা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ভারতীয় কূটনীতিক সুরজিৎ সিংকে বহিষ্কার করে। একদিন পরে ভারত একই অভিযোগ তুলে পাকিস্তানের একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য উত্তেজনা তুঙ্গে। কারণ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে। তাদের দাবি ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করেনি পাকিস্তান। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের একটি সামরিক আদালত ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদবকে ভারতীয় গুপ্তচর আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

তিন তিনবার যুদ্ধে জড়ানো চিরবৈরি ভারত ও পাকিস্তান এখনও নিয়মিত সীমান্তে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাছাড়া কাশ্মীর নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা প্রবল। গত বছর হওয়া শেলিংয়ে এলওসির উভয় পাশেই বেশ কয়েকজন সাধারণ নাগারিক মারা গেছে। তার ওপর এখন সামনে এসেছে কূটনীতিকদের হয়রানি করার এতো অভিযোগ। আশার কথা, এমন বৈরিতা সত্ত্বেও, এ মাসের শুরুর দিকে ভারতের একটি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে পাকিস্তান। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে উভয়পক্ষের কাছে আটক থাকা মহিলা বন্দী, মানসিক প্রতিবন্ধী এবং সত্তরোর্ধ ব্যক্তিরা মুক্তি পাবে।