কাশ্মিরে ৩ সহকর্মীর মৃত্যু, পুলিশ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ঘোষণা

তিন সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর কাশ্মিরে নিযুক্ত ভারতীয় বিশেষ পুলিশের সদস্যরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এরকম ছয়টি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকার দাবি করেছে, আসলে কাশ্মিরের বিশেষ পুলিশে পদত্যাগের কোনও ঘটনা ঘটছে না। দুষ্কৃতকারীরা এমন ভিডিও প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যাদের কর্মকাণ্ড রিভিউ করে চাকরির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তারাই পদত্যাগের দাবি করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, যে তিন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে পদত্যাগের এই ভিডিওগুলো প্রকাশিত হচ্ছে তাদেরকে কাশ্মিরের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন আগে থেকেই চাকরি না ছাড়লে হত্যা করার হুমকি দিয়ে আসছিল। পরবর্তীতে তাদের প্রথমে অপহরণ ও পরে গুলি করে তাদেরকে হত্যা করা হয়। টুইটারে এ বিষয়ে দায় স্বীকার করে বিবৃতিও দেয় হিজবুল মুজাহিদিন।strike-in-srinagar_a87ed6f8-bd4d-11e8-8a71-2e69120e7585

ভারতের পুলিশ জানিয়েছে, কাশ্মিরে নিয়োজিত বিশেষ পুলিশ অফিসারদের (এসপিও) পদত্যাগের যে ছয়টি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর সত্যতা পরীক্ষা করে দেখা হবে। একটি ভিডিওতে সাব্বির আহমাদ থোকার নামের একজন ব্যক্তি ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি দক্ষিণ কাশ্মিরের সামনুর বাসিন্দা। আট বছর এসপিও হিসেবে  কর্মরত। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর বাহিনীতে না থাকার। তার ভাষ্য, কোনও চাপে পড়ে তিনি এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেননি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই আরেকটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেছে, যেখানে আরেকজন এসপিও গত সোমবার তার পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন।

এদিকে কাশ্মিরে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যা ও পরে এসপিওদের পদত্যাগের ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় ভিন্নমত পোষণ করেছে ভারত সরকার। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মিরের পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে পদত্যাগের বিষয়ে হওয়া প্রতিবেদনগুলো অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ রাজনাথ সিং এমন কি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত তার টুইটার বার্তাতেও উল্লেখ করেছেন: ত্রিশ হাজার এসপিও কর্মরত রয়েছেন। এদের কর্মকাণ্ড নিয়মিত বিরতিতে মূল্যায়ন করা হয়। যাদেরকে প্রশাসনিক কারণে এসপিও হিসেবে আর রাখা হবে না, কিছু দুষ্কৃতকারী তাদেরকে ব্যবহার করেই পদত্যাগ সংক্রান্ত এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।

যে তিন এসপিওর হত্যা নিয়ে ঘটনার শুরু, তাদের সবাইকেই হিজবুল মুজাহিদিন হুমকি দিয়েছিল। তাদের ভাষ্য, এসপিও হয়ে চাকরি করারর মাধ্যমে তারা ভারত সরকারের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। যদি ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাকরি না ছাড়লে তাদেরকে হত্যা করা হবে। পরবর্তীতে প্রায় দুই ডজন সশস্ত্র ব্যক্তি ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং সেখান থেকে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই তিন এসপিওকেই হিজবুল মুজাহিদিন গুলি করে মেরে ফেলে।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, গত মাসেও সন্ত্রাসীরা পুলিশ সদস্য ও তাদের স্বজনসহ ১১ জনকে অপহরণ করেছিল। অপহৃতদের মুক্তির জন্য তারা সংগঠনটির সশস্ত্র ব্যক্তিদের স্বজনদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মিরের পুলিশ হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার নাইকুর বাবা এবং অপরাপর সশস্ত্র ব্যক্তির স্বজনদের গোপনে ছেড়ে দেয়। বদলে হিজবুল মুজাহিদিন পুলিশ কর্মকর্তাদের অপহৃত ১১ জন স্বজনকে মুক্তি দেয়। ওই ঘটনায় জম্মু ও কাশ্মিরের পুলিশ প্রধান এসপি ভেইদকে পদ থেকে সরিয়ে দেয় ভারত সরকার।