রাফাল জঙ্গি বিমান নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, মোদির পদত্যাগ দাবি

রাফাল জঙ্গি বিমান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের দাসু এভিয়েশনের স্থানীয় সহযোগী নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। সে প্রেক্ষিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগের দাবি তুলেছে বিরোধী দলীয় নেতারা। এ ঘটনার শুরু ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্টে ফ্রাঁসোয়া ওলাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে। তিনি গত শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) ফরাসি সংবাদপত্র মিডিয়াপার্টকে বলেছেন, স্থানীয় সহযোগী নির্ধারণে দাসু এভিয়েশন বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়নি। বরং ভারত সরকারের পক্ষ থেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, রাফাল বিমান ক্রয় নিয়ে মোদির বিরুদ্ধে ২০১৬ সাল থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ করে আসছে। ফ্রাঁসোয়া ওলাদের বক্তব্যে তাদের অভিযোগের পক্ষেই সমর্থন পাওয়া যায়।মোদি ও হল্যান্ড

বিদেশি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ভারতীয় আইনে শর্ত রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে ভারত সংশ্লিষ্ট পণ্য প্রস্তুতে সক্ষমতা অর্জন করে। আর সেই ৩০ শতাংশের পার্টনার হিসেবে রিলায়েন্স ডিফেন্সকে গ্রহণ করতে হয়েছিল দাসু এভিয়েশনকে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে রুশ জঙ্গি বিমান উৎপাদন করে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের কথা বিবেচনা করা হয়নি।

এমন ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে মোদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীরা তার পদত্যাগ চান। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছেন, ‘ফ্রাঁসোয়া ওলাদেকে ধন্যবাদ জানাই এ সত্য প্রকাশের জন্য যে মোদি নিজে শত কোটি ডলারের ব্যবসার সুযোগ  অনীল আম্বানির হাতে তুলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’ তিনি টুইটারে লিখেছেন, এই দুর্নীতির মাধ্যমে মোদি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করেছেন! কংগ্রেসের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, দুর্নীতি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে যে মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন, হল্যান্ডের দেওয়া বক্তব্যের পর তার আর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার কোনও অধিকার নেই। ছোট ছোট অপরাপর দলগুলোও মোদির সমালোচনায় মুখর হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটার বার্তায় বলেছে, ফ্রান্স ও ভারতে এ বিষয়ে কোনও কিছু বলার নেই। রিলায়েন্স এ নিয়ে কোনও কিছু বলতে রাজি হয়নি। দাসু এভিয়েশন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, উৎপাদন সক্ষমতার জন্যই তারা রিলায়েন্স ডিফেন্সকে স্থানীয় সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছে।

বিজেপির আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেছেন, রাফাল জঙ্গি বিমান নিয়ে দুর্নীতি হয়ে থাকলে তা কংগ্রসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সময়ই হয়েছে। দাসু ও রিলায়েন্স ডিফেন্স ২০১২ সাল থেকে কাজ করছে।

কিন্তু বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে সমর্থন দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম কুইন্টকে অর্থনীতিবিদ অরুণ সূরি বলেছেন, লব্ধ প্রতিষ্ঠিত একটি বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও রিলায়েন্স ডিফেন্সের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে সহযোগীকে হিসেবে দাসু এভিয়েশনের এমনি এমনি বেছে নেওয়ার কথা নয়। রিলায়েন্স ডিফেন্স যে শিল্প গ্রুপের অংশ তার মোট ঋণ ১.২১ লাখ কোটি রুপি।

রাফায়েল