মোদির প্রথম নির্বাচনি ধাক্কা, ঘুরে দাঁড়ালো রাহুলের কংগ্রেস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথমবারের মতো বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। মঙ্গলবার গত কয়েকদিনের প্রতীক্ষিত পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনি ফলে বিজেপির একক আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে বিবেচিত মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের কাছে হেরে গেছে বিজেপি। তবে তেলাঙ্গানা ও মিজোরামে কংগ্রেস ও বিজেপি কেউই স্থানীয় আঞ্চলিক দলের কাছে পাত্তা পায়নি।

modinrahul1_660_121118095404

আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফল এখনও ঘোষণা করা না হলেও যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। রাজস্থানে ভোট হওয়া ১৯৯টি আসনের মধ্যে ১০২টিতে এগিয়ে কংগ্রেস, বিজেপি ৭২টিতে। ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশে ১১৬টিতে কংগ্রেস এবং বিজেপি এগিয়ে ১০৫ আসনে। ছত্তিশগড়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। ৯০টি আসনের মধ্যে ৬৩টিতে কংগ্রেস ও ১৮টিতে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। তেলেঙ্গানায় চন্দ্রশেকর রাওয়ের টিআরএস ৮৬টি আসনে এগিয়ে থেকে সরকার গঠনের পথে রয়েছে। মিজোরামে ক্ষমতাসীন মিজোরাম কংগ্রেসকে পরাজিত করে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)।

পাঁচ রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচন ছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ভোটযুদ্ধ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ভোটকে 'দিল্লি দখলের সেমিফাইনাল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ ভোটযুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে গেলো কংগ্রেস। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি শিবিরে হতাশা নেমে এসেছে।

লোকসভা নির্বাচনের আগে বিধানসভা নির্বাচনের এই ফল বিজেপির জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। যদিও কেউ কেউ বলছেন, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাঁচ বছর কেন্দ্রে শাসন করার পর মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে। বিজেপির এই ভরাডুবি লোকসভা নির্বাচনের আগে  কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা দিতে পারে। তা শুধু এই তিন রাজ্যে সীমিত থাকবে না। গোটা বিজেপি বলয়ে সংক্রমণ ঘটতে পারে। তা ছাড়া এই ফলাফলের পর সংসদের ভিতরে বিরোধীদের থেকে আরও চাপে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে সরকারের।  কেউ কেউ মনে করছেন, আরও বড় বিপদ আসতে পারে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতির সামনে। বাইরে যুদ্ধের পাশাপাশি এ বার গৃহযুদ্ধও সামাল দিতে হতে পারে বিজেপিকে। সবমিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনে আগে সত্যিকার অর্থেই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন মোদি-অমিত শাহ। 

মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে তাদের অন্যতম মিত্র শিবসেনা। তাদের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘ভোটের ফলাফলের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে বোঝা যায়, বিজেপির বিজয়রথ থেমেছে।’ এমনিতেই বিজেপির বিরুদ্ধে শিবসেনার অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু এতদিন বিজেপির ভোট ও নির্বাচনি সাফল্যে তারা হালে পায়নি। এবার বিজেপির বড় ভাই সুলভ আচরণের বিরুদ্ধাচারণ করবে জোরেশোরেই। এই কটাক্ষ থেকেই সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।

congressflag-968706910_6

বিধানসভা নির্বাচনে এমন ভরাডুবির পর পশ্চিমবঙ্গ সফর বাতিল করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে জনসভায় উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল মোদির। কিন্তু মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে ওই সমাবেশ আর আয়োজন করা হচ্ছে না। অবশ্য জনসভায় মোদির উপস্থিত না হওয়া ও বাতিলের কারণ সম্পর্কে ভিন্ন মত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন  পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে ভরাডুবির কারণই মোদির সফর বাতিলের কারণ। তবে অপরপক্ষ বলছে, রাজ্য বিজেপির রথযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে টানাপোড়েনের কারণেই শিলিগুড়িতে সফর বাতিল করেছেন মোদি।

পাঁচ রাজ্যের এই ফল পশ্চিমবঙ্গে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।তিনি বলেন, এই পাঁচ রাজ্যের ফলাফলের কোনও প্রভাব বাংলায় পড়বে না। বিজেপি বাংলায় যে রকম লড়ছে, সেরকমই লড়াই করবে। সিপিএম ও তৃণমূলের উজ্জীবিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বাংলায় বিজেপি এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না।

লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ফল বিজেপির এই ভরাডুবি শুধু নয়, কংগ্রেসের উত্থানেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ও পরের বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে কংগ্রেসের পরাজয়ের ফলে ১৩৩ বছর পুরনো দলটি সর্বভারতীয় স্বীকৃতিই হারাতে বসেছিল। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোতে দুর্বল হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে দরকষাকষিতে পেরে উঠছিল না কংগ্রেস। ফলে অনেক স্থানেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটগুলো ভেঙে পড়ছিল। কিন্তু মঙ্গলবারের ফল আবার কংগ্রেসকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসবে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব ও সংগঠনকে শক্তিশালী করবে।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, কংগ্রেস হারতে হারতে পরাজয় মেনে নেওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছিল। কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছি। বিজেপিকে মনে হচ্ছিল অস্পৃশ্য। দলটি জানতো না তারা আবার ক্ষমতায় আসতে পারে। গুজরাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও অন্য কোনও রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাছাকাছিই ছিল না রাহুলের দল। কিন্তু এখন দলটি ও নেতাকর্মীরা মনে করেন, পরিস্থিতির বদল সম্ভব। কংগ্রেস ব্যর্থতা ঝেড়ে আস্থার সঙ্গেই লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। গত নির্বাচনের মতো মাত্র ৪৪টি আসন জয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না কংগ্রেস। এবার উত্থান ঘটবে। এই রাজ্যগুলোর ক্ষমতায় থাকা তাদের দলের সক্ষমতাও বাড়িয়ে দিবে।