সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে: মোদি

ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর নরেন্দ্র মোদিকেই সংসদীয় নেতা নির্বাচন করেছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। শনিবার নির্বাচিত হওয়ার পর এনডিএ থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রতি দেওয়া ভাষণে মোদি বলেছেন, ভোট-ব্যাংক রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করে তাদের কারণে সংখ্যালঘুরা দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে বাস করছেন। আমাদের এই প্রবণতার ইতি ঘটাতে হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিতে হবে। আমাদেরকে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

Modi-1558792018

এনডিএ জোটের বৈঠকে মোদিকে নেতা নির্বাচিত করার পর তা মেনে নিয়ে ৭৫ মিনিটের ভাষণ দেন মোদি। ভাষণে জোটের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ‘মন থেকে সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাল্পনিক আতঙ্ক’ মুছে ফেলতে বলেছেন। ভাষণে মোদি কংগ্রেসসহ বিরোধী দলকে ইঙ্গিত করে সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে তুলে আনলেও এই প্রথমবার তিনি স্বীকার করলেন যে, এক্ষেত্রে অসমতা রয়েছে।

নতুন সরকারের নীতি কী হবে তা তুলে ধরতে গিয়ে মোদি জানান, তার সরকারের স্লোগান হবে ‘সবার জন্য উন্নয়ন’। সরকারের দর্শনে এই নতুন নীতি অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তিনি বলেন, সবার সাথে, সবার উন্নয়ন এবং এখন আমাদের মন্ত্র হলো সবার বিশ্বাস।

ভাষণে মোদি ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতার লড়াইয়ের কথা স্মরণ করেন। বলেছেন, ওই সময় সব সম্প্রদায়ের মানুষ স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছে। একই ধরনের আন্দোলন আমাদের শুরু করতে হবে ভালো শাসনের জন্য। মোদি বলেন, যারা আমাদের বিশ্বাস করে আমার তাদের সঙ্গে থাকব এবং তাদেরও সঙ্গে থাকব যাদের বিশ্বাস আমাদের জয় করতে হবে।

এর আগে শনিবার লোকসভার সেন্ট্রাল হলে এনডিএ জোটের বৈঠকে তাকে এ দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত করা হয়। অমিত শাহ ছাড়াও মুরলীমনোহর জোশী এবং লালকৃষ্ণ আদভানী-র মতো বর্ষীয়ান বিজেপি নেতারা এ বৈঠকে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা নীতীশকুমার, লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসওয়ান, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে-সহ বিজেপি-র শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা।

পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত করার পর মোদিকে ফুলেল শুভেচ্ছা বিজেপি ও এনডিএ জোটের অন্য শরিক দলগুলোর নেতারা। এরপর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ভাষণ দেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। একইসঙ্গে তিনি শরিক দলগুলোকেও পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। অমিত শাহের পর বক্তব্য রাখেন  মোদি। তিনি বলেন, এনডিএ জোট বিপুল গণরায় পেয়েছে। এটি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিলো। জাতীয় উচ্চাশা আর আঞ্চলিক প্রেরণা, এই দুই নিয়েই এগোতে হবে আমাদের। কোনও একটিকে উপেক্ষা করলে চলবে না। এটাই আমাদের নতুন স্লোগান।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম এত বেশি ভোট পড়েছে। এনডিএ এখন একটা বিশ্বাসযোগ্য আন্দোলনের নাম। এই দেশের মাতৃশক্তি আমার রক্ষাকবচ। আগে নারী ভোটদাতাদের সংখ্যা পুরুষ ভোটদাতাদের চেয়ে চার-পাঁচ শতাংশ কম থাকতো। এই নির্বাচনে পুরুষ এবং নারী ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় সমান। আগামী দিনে নারীরা পুরুষদের ছাড়িয়ে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এই দেশ পরিশ্রমের, আত্মমর্যাদার পূজা করে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কোটি কোটি মানুষের সংকল্প অনেক বড় কাজ করতে প্রেরণা দেয়। ভারতের জনগণের সংকল্পের প্রমাণ প্রতিভাত হয়েছে নির্বাচনের ফলাফলে।

মোদি বলেন, এই নির্বাচনে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনও জায়গা করে নিতে পারেনি। এই নির্বাচন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিয়েছে। এই নির্বাচন ছিল ইতিবাচক, এই গণরায় সব অর্থেই ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন, যদি কোনও ভুল হয়, তবে তা মেনে নিয়ে শুধরে নিয়ে চলতে হবে। সমতা আর মমতা, এই দুই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। বিশ্বের দরবারে ভারতকে আরও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমার লক্ষ্য। বিজেপি-র সব সদস্য, এনডিএ জোটের শরিক দলের সব নির্বাচিত সদস্য আমাকে পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত করায় আমি কৃতজ্ঞ।

এদিকে নতুন সরকার গঠন নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদি। বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি ১৬ তম লোকসভা ভেঙে দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলো।