বর্ধমান বিস্ফোরণ মামলায় চার বাংলাদেশিসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড

পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া চার বাংলাদেশিসহ ১৯ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে রাজ্যটির একটি আদালত। শুক্রবার এই দণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। কারাদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে ৬ জনের সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুই নারী ও আসামের এক শিক্ষার্থীর ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং বাকিদের ৮ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার রুপি জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এখবর জানিয়েছে।

8898

১৯ জনের মধ্যে ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে শেখ রহমতুল্লাহ, সাইদুল ইসলাম ওরফে শামিম, মুহাম্মদ রুবেল, সাদিক ওরফে সুমন, হবিবুর ওরফে জাহিদুর ইসলাম এবং তারিকুল ইসলামের। ৮ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেনআবদুল হাকিম, রেজাউল করিম, আবদুল ওয়াহাব মোমিন, হাবিবুল রহমান, নুর আলম, নুরুল হক মণ্ডল, গিয়াসুদ্দিন মুন্সি, শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার, আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজল এবং মফিজুল আলি। এ ছাড়া  দুই নারী গুলসানা বিবি ও আলিমা বিবি এবং সাইকুল ইসলাম খানের ৬ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

আসামীদের আইনজীবী ফজলে আহমেদ খান জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে দোষীদের। তবে হাইকোর্টে যাওয়া হবে কিনা, তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছিলাম। তবে আদালত যা রায় দিয়েছে, তা মাথা পেতেই নেওয়া উচিত।

দোষীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশদ্রোহীতা, ইউএপিএ, অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বাংলাদেশি চার জনের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টেও মামলা রুজু করেছিল এনআইএ। এই ধারাগুলিতে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন ও সর্বনিম্ন সাজার পাঁচ বছর। কিন্তু দোষীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়ার আবেদন জানালে তা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় দেওয়ার পর বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল বলেন, আপনারা দ্রুত সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুন।

আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, দোষী ১৯ জন সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চায় বলে জানিয়ে সর্বনিম্ন সাজার আবেদন জানায়। তাদের বক্তব্য, সবারই পরিবার ও সন্তানসন্ততি রয়েছে। তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা ও কর্তব্য রয়েছে। সেই কারণেই তারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চায়। আর এই যুক্তিতেই সবচেয়ে কম সাজার আবেদন জানায় তারা।

শুক্রবার রুদ্ধদ্বার শুনানি হয় আদালতে। দোষী ১৯ জন, সরকারি এবং অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী ছাড়া কাউকেই ভেতরে থাকতে দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, প্রত্যেকের সঙ্গেই বিচারক আলাদা করে কথা বলেন। তখনই বিচারকের কাছে দোষীরা মূল স্রোতে ফেরা এবং সর্বনিম্ন সাজার আবেদন জানায়।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর অষ্টমীর দিন বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল শাকিল গাজি নামে এক ব্যক্তির। গুরুতর আহত ছিল করিম শেখ নামে আরও এক জন। প্রথমে জেলা পুলিশ পরে সিআইডি এবং সব শেষে ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল এনআইএ।

বিস্ফোরণে বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নাম উঠে আসে। বিস্ফোরণের পর ওই বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হয় গুলসানা বিবি ওরফে রাজিয়া এবং আলিমা বিবি নামে দুই নারীকে। তদন্তে এনআইএ এখনও পর্যন্ত মোট ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ১৯ জন বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেই ১৯ জনেরই শুক্রবার সাজা ঘোষণা করে নগর ও দায়রা আদালত। তবে বিস্ফোরণের জড়িত জেএমবির গ্রেফতার হওয়া শীর্ষ নেতা কদর গাজি, কওসর ওরফে বোমা মিজান, ডালিম শেখ, ইউসুফ শেখ দোষ স্বীকার করেনি। ওই ১২ জনের বিচারপ্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছেন বিচারক।