বাবরি মসজিদের দাবি ছেড়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার মুসলমানদের

বাবরি মসজিদের ভূমির মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার সমঝোতা প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে মামলার মুসলমান পক্ষ। শুক্রবার জমিয়তে উলেমা হিন্দ ও অপর মুসলমান পক্ষের এক আইনজীবী এই দাবি করেছেন। এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্কে গঠিত মধ্যস্থতাকারীদের সমঝোতা প্রস্তাবে রাজি হয়ে মুসলিম পক্ষ ভূমির মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছে।

98989

আইনজীবী এজার মকবুলের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীরা কোনও প্রস্তাবে সম্মত হইনি, যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অথবা ভূমির মালিকানা ছেড়ে দিয়ে সমঝোতায় আমরা রাজি হইনি।

মকবুল দাবি করেন, এই বিষয়ে খবর ফাঁস করেছে হয় মধ্যস্থতাকারী কমিটি অথবা নির্ভানি আখড়া। তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ মধ্যস্থতা কমিটিতে সবার প্রতিনিধিত্ব ছিল না। এটা তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ যে, এমন ফাঁস হওয়ার ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা। কারণ এমন প্রক্রিয়া গোপন থাকার কথা।

বাবরি মসজিদের অবস্থান উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে৷ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশের দাবি, যেখানে মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে সেই জায়গাটি ছিল দেবতা রামের জন্মভূমি, তা ভেঙে মসজিদ বানানো হয়। এ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ বহুদিনের। ১৯৯২ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। এর জেরে সৃষ্ট দাঙ্গায় প্রাণ হারায় অন্তত ২ হাজার মানুষ। ভারতের প্রাচীন শহর অযোধ্যার ওই বিতর্কিত স্থানটি কোন সম্প্রদায়ের দখলে থাকবে, তা নিয়ে মামলা চলছে ৬০ বছর ধরে।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাবরি মসজিদের ভূমি তিন ভাগে ভাগ করে বণ্টনের আদেশ দেয়। আদালতের নির্দেশনায় মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড, নিরমাজি আখড়া আর রামনালা পার্টিকে সেখানকার ২ দশমিক ৭ একর জমি সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছিল।  বুধবার সেই শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ নভেম্বরের আগে এই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

৮ মার্চ ভারতের প্রধান রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে বাবরি মসজিদ সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়। ওই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এফএমআই কলিফুল্লাহ। তার সঙ্গে কমিটিতে আরও থাকবেন হিন্দু ধর্মীয় গুরু রবি শংকর এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী শ্রী রাম পাঞ্চু। কমিটি তাদের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, ওই মধ্যস্থতাকারী প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাম মন্দিরের জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে দাবি প্রত্যাহার করে নেবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। এর পাশাপাশি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে পাওয়া মসজিদগুলোর একটি উপস্থাপন করবে তারা। আর আদালতের নিয়োগকরা একটি কমিটি নামাজের জন্য ব্যবহৃত এসব মসজিদগুলোর নামকরণ করবে।