ভিন্নমত অবলম্বনের জন্য জেল হতে পারে না: দিল্লির আদালত

‘দেশদ্রোহিতা’র মামলা থেকে ভারতের পরিবেশকর্মী দিশা রবির জামিন আবেদন মঞ্জুর করতে গিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে শক্তিশালী মন্তব্য করেছে দিল্লির আদালত। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি বলেছেন, সংবিধানে নাগরিকদেরকে ভিন্ন মত পোষণের অধিকার দেওয়া আছে। কেবল রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার জন্য তাদের জেল হতে পারে না। এদিন দিল্লি পুলিশকেও কটাক্ষ করেছেন বিচারপতি। ভারতীয় সংবা্দমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

কৃষক আন্দোলনকে সমর্থনের ডাক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি টুলকিট শেয়ার করেছিলেন দিশা। তাতেই দেশদ্রোহিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল। তাদের দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরির জন্য 'পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশনের' নামে একটি ‘খলিস্তানপন্থী’ গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন দিশা। ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় তাকে। পরিবেশকর্মীর বিরুদ্ধে ওই টুলকিটটি তৈরির অভিযোগও এনেছিল দিল্লি পুলিশের তদন্তকারীরা। যদিও দিশা জানিয়েছিলেন, তিনি টুলকিটটি বানাননি। গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে তাকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপর তিনদিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে কাটিয়েছিলেন। সোমবার তাকে একদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার দিশার জামিনের আর্জি মঞ্জুর হয়েছে।

এদিন বিচারক ধর্মেন্দ্র রানা দিল্লি পুলিশের কাছে জানতে চান, দিশার সঙ্গে ২৬ জানুয়ারি কৃষক বিক্ষোভে সহিংসতার সংযোগ রয়েছে কি না? এ বিষয়ে কী প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে? দিল্লি পুলিশ কোনও  প্রমাণ দিতে পারেনি। 

বিচারপতি তখন বলেন, ‘আমি মনে করি একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকরা হলো সরকারের বিবেকের রক্ষক। কেবল রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সঙ্গে ভিন্ন মত প্রদর্শনের জন্য তাদেরকে কারাগারে আটকে রাখা যায় না।’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘এমনকি ভারতের প্রতিষ্ঠাতারাও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অলঙ্ঘনীয় মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। ভারতের সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় দৃঢ়ভাবে ভিন্ন মত পোষণের অধিকার দেওয়া আছে। আমার বিবেচনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মনযোগ আকর্ষণ করতে চাওয়াটাও মত প্রকাশের অধিকারেরই অন্তর্ভূক্ত। যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনও ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা থাকে না।’

দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “ষড়যন্ত্র প্রমাণের জন্য পারিপার্শ্বিক প্রমাণই ভরসা।” বিচারক দিশার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে বলেন ‘অত্যন্ত সামান্য এবং ভাসাভাসা প্রমাণ থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে ২২ বছরের মেয়ের জামিনের অধিকার ভঙ্গ করার কোনও উপযুক্ত কারণ পেলাম না। যার অপরাধের কোনও ইতিহাস নেই।’