পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এখন তৃতীয় পক্ষ আব্বাস সিদ্দিকী

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ৭৭ আসন নিয়ে বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে বিজেপি। অবিভক্ত বাংলার আইন সভার ইতিহাসে প্রথমবার একটিও আসন না পেয়ে বিধানসভার দরজা আপতত বন্ধ থাকছে কংগ্রেস এবং বামদের জন্য। তবে তাদের জোট সঙ্গী এবং নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগে দল বানিয়ে জিতে এসেছেন কেবল ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) নেতা আব্বাস ভাঙড় আসন থেকে জিতে আসায় এখন তিনি বিধানসভায় তৃতীয় পক্ষ।

বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগে দল তৈরি হলেও আব্বাস নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাননি। সেই বিহারে রাজনৈতিক দল হিসেবে কমিশনে নিবন্ধিত রাষ্ট্রীয় সেক্যুলার মজলিশ পার্টির হয়ে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নামে আইএসএফ। তাদের ভোটের প্রতীক খাম নিয়ে আইএসএফের ২৭ জন প্রার্থী বিধানসভা ভোটে লড়াই করে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, রাষ্ট্রীয় সেক্যুলার মজলিশ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসারুল হক। দলটির জন্ম ২০১৯ সালে। এই দলটির স্যোসাল মিডিয়ার পেজগুলোর তথ্য অনুসারে বিহার, বাংলা, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশে এবং মহারাষ্ট্রে সংগঠন রয়েছে। বাংলায় দলটির রাজ্য সভাপতি সামসুর আলি মল্লিক। দলটি ২০২০ সালে বিহার বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু ফ্রন্ট, জাতীয় লোকমত পার্টি এবং ক্রান্তি মোর্চা দলের সঙ্গে বিহার প্রোগেসিভ অ্যালায়েন্স তৈরি করে লড়াই করলেও তাদের ভাগ্যে একটিও আসন জোটেনি।

রাষ্ট্রীয় সেক্যুলার মজলিশ পার্টির একমাত্র বিধায়ক রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ভাঙড় বিধানসভায় নওশাদ সিদ্দিকী এমনটাও দাবি করা হয়েছে দলটি স্যোসাল মিডিয়ার পেজে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারেও আইএসএফ নয়, রাষ্ট্রীয় সেক্যুলার মজলিশ পার্টির বিধায়ক হিসাবেই নওশাদ সিদ্দিকী নির্বাচিত হয়েছেন বিধানসভায়।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বামদের বিরোধ না হলেও কংগ্রেসের বিরোধে প্রায় জোট ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। আব্বাস সিদ্দিকী সেই সময় দাবি করেছিলেন তার দল ১০০টি আসন পাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব মিলে মাত্র ২৭ আসনে প্রার্থী দেয় আইএসএফ। এরমধ্যে মাত্র ১টি আসন জিতলেও ৮ আসনে জামানত হারিয়েছে আইএসএফ। এরমধ্যে ২০টি আসনে তৃতীয় স্থানে। একটি আসনে পঞ্চম স্থানে। একটি আসনে চতুর্থ স্থানে থাকেন তাদের প্রার্থীরা। মাত্র ৪টি আসনে আইএসএফ থাকে দ্বিতীয় স্থানে।

খোদ পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর নিজের বিধানসভা হুগলির জাঙ্গিপাড়া, যার মধ্যে ফুরফুরা শরিফ অবস্থিত সেখানে আইএসএফ প্রার্থী শেখ মইনুদ্দিন বুদো মাত্র ১৭ হাজার ৭৫৬ (৮ শতাংশ) ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকেন। হুগলির অপর বিধানসভা হরিপালে আইএসএফের সভাপতি শিমুল সোরেন ১৫ হাজার ৭৯৫ (৭.১৫ শতাংশ) ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান পান। রাইপুরে মিলন মান্ডি ৬৫৯৩, চন্দ্রকোনায় গৌরাঙ্গ দাস ১০৮০১, খানাকুলে ফয়জল খান ৮৭৩২, রানাঘাট উত্তর পূর্বে দিনেশচন্দ্র বিশ্বাস ৫২০৪, চাপড়ায় কাঞ্চন মৈত্র ৩৮৬৫, মূয়রেশ্বরে কাশিনাথ পাল ৫৫৬২, আসানসোল উত্তর মহম্মদ মুস্তাকিন ৪৪৭১ এবং মোথাবাড়িতে মহম্মদ আলি কালিমুল্লা ৩৫৮৫ ভোট পেয়ে জামানত হারান। সব মিলিয়ে আইএসএফের প্রাপ্ত ভোট ৭৮৮১৭৫টি। শতাংশ হারে ০.৩৪।

আইএসএফের প্রতিষ্ঠাতা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী বলেন, ‘এই হার আমি মেনে নিয়েছি। তারপরেও কোথাও মনে হচ্ছে জোর করে হারানো হয়নি তো। বিজেপিকে বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গর মানুষের এই যে ভোট-পরবর্তী হিংসায় ক্ষতি হলো, তার কী হবে? চার মাসের দল তৈরি করে ১টা আসন পেয়েছি। তাদের স্বপ্ন ছিল বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়ে যাবে। সেখানে আইএসএফ একটা খিচ হয়ে রইলো।’