মন্ত্রিসভার দুই সদস্য গ্রেফতার, ধর্নায় বসলেন মমতা

নারদা কেলেংকারির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের নতুন মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার সিবিআই কার্যালয়ে ধর্নায় বসে তাকেও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। মমতা বলেন, ‘ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি, সিবিআই আমাকেও গ্রেফতার করুক।’ ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বাইরে বিক্ষোভ করলেও প্রায় ৪৫ মিনিট সিবিআই কার্যালয়ে ধর্নায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। 

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের পর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ নতুন মোড় নিয়েছে। সোমবার সকালে রাজ্যের দুই মন্ত্রী এবং তৃণমূলের অন্য দুই নেতাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

স্থানীয় সময় সকাল নয়টার কিছু পরে ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য তৃণমূল এমএলএ মদন মিত্র এবং সাবেক তৃণমূল নেতা শোভন চট্টপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েও তাদের তুলে নেয়। কলকাতার সাবেক মেয়র শোভন ২০১৯ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু এই বছরের মার্চে বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেন।

এই মাসের শুরুতে ওই চার জনের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরুর অনুমোদন দেয় রাজ্যের গভর্নর জগদীপ ধনগড়। কোনও এমএলএ’কে বিচারের মুখোমুখি করতে হলে বিধানসভার স্পিকারের অনুমোদন নেওয়ার দরকার পড়ে। তবে এই মামলায় সিবিআই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকারের কাছে না গিয়ে এর পরিবর্তে গভর্নরের অনুমোদন নেয়। গভর্নর জগদীপ ধনগড় দাবি করেন ওই চার জনের বিরুদ্ধে অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার তার রয়েছে কেননা ২০১১ সালে তাদের প্রত্যেককেই তিনি মন্ত্রীর শপথ পড়িয়েছেন।

২০১৪ সালে নারদা কেলেংকারির টেপ ফাঁস হওয়ার সময়ে ওই চারজনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। টানা তৃতীয় বারের মতো এই মাসে গঠন করা নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যও রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

নারদা নিউজ পোর্টালের এক স্টিং অপারেশনে ফেঁসে যায় তৃণমূল নেতারা। দিল্লির এক সাংবাদিক ব্যবসায়ী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখান। এ কারণে তিনি তৃণমূলের সাত এমপি, চার মন্ত্রী, এক এমএলএ এবং এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুষ দেন। আর পুরো প্রক্রিয়াটি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফাঁস করা হয় ‘নারদা টেপ’ নামের এসব ফুটেজ।

নারদা টেপে অভিযুক্ত তৃণমূলের ১২ নেতার মধ্যে ছিলেন মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী। ওই সময়ে তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি ছিলেন মুকুল এবং লোকসভার এমপি ছিলেন শুভেন্দু। পরে তারা দুজনেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

এবারে নন্দীগ্রাম থেকে এমএলএ নির্বাচিত হওয়া শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিচার শুরুর অনুমোদন দেননি লোকসভার স্পিকার ওম বিরলা। আর মুকুল রায় এখন বিজেপির নির্বাচিত এমএলএ নন। তার বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তৃণমূলের চার নেতাকে গ্রেফতারের পর সোমবার সকালে নবান্নে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বাড়ি থেকে সোজা চলে আসেন নিজাম প্যালেসে সিবিআই কার্যালয়ে। সকাল ১০ টা ৪৭ মিনিটে নিজাম প্যালেসে এসেই সোজা দুর্নীতিদমন শাখার ১৫ তলার অফিসে চলে যান তিনি। নীচে লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা। তৃণমূলের নেতা তথা আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত জানান, ‘বেআইনিভাবে’ গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাঁকেও গ্রেফতার করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন মমতা। নাহলে তিনি সিবিআই দফতর থেকে বেরোবেন না। তিনি বলেন, ‘মমতা জানিয়েছেন, বেআইনিভাবে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁকেও গ্রেফতার করতে হবে।’